নওমুসলিমের জীবন গল্প (১) খ্রিস্টান থেকে মুসলিম...
রাফায়েলের জন্ম তাঞ্জানিয়ার ধনাঢ্য এক খ্রিস্টান পরিবারে। জন্ম সূত্রে খ্রিস্টান হলেও কৈশরের গন্ডি পেরোনোর আগেই রাফায়েল খুজে পায় সত্যের শিকড়। যা পেয়ে তার মনে হলো এটাইতো সেই চির সত্য যার জন্য আমার এতদিনের অপেক্ষা।
স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকেই রাফায়েল বিভিন্ন ধর্মের পুস্তকে নিজের মনের গহীনে জেগে ওঠা নানান প্রশ্নের জবাব খুজে বেড়াতো। কিন্তু সেসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া হতো না তার। যদিও চার্লসের পাদ্রিদের কাছ থেকে কিছু কিছু উত্তর পেত, কিন্তু সেগুলো তার মনপুত হতো না।
রাফায়েল নিজের সেই মনপুত উত্তর পেতে আরো অন্যান্য ধর্মের জ্ঞান আহরণে ব্যস্ত হলো৷
এক পর্যায়ে রাফায়েল লক্ষ্য করলো একটা গ্রন্থে তার প্রায় সব জিজ্ঞাসার নিখুত উত্তর পাওয়া যাচ্ছে। তার মন ধীরে ধীরে সেদিকে গলতে শুরু করলো।
সময়ের সাথে সাথে ইসলামের সাথে রাফায়েলের সম্পর্ক সুদৃঢ় হতে থাকে। কিছুদিন পর সে হিজাব পড়া শুরু করলো৷ কিন্তু তা করতে হতো লুকিয়ে। পরিবারের কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ!
অল্প কিছুদিনের মধ্যে-ই ঘটনা ঘটে গেলো। রাফায়েলের মা বুঝতে পেরে গেলেন মেয়ে তার ধর্মান্তরিত হয়ে গেছে। মেয়ের ঘরে বোরকা হিজাব, তাসবীহ এবং কিছু ইসলামিক বই সেটার-ই প্রমাণ দিচ্ছে।
রাফায়েলের মা যখন এই ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করলো সে মিথ্যা বলতে পারলো না। কারন সে হাদিসে পড়েছে, মিথ্যা বলা মহাপাপ। এই পাপ সে করতে পারবে না বিধায় নিচের দিকে চেয়ে নরম আর ভীত গলায় বললো, আমি মুসলমান হয়ে গেছি মা।
মেয়ের এমন উত্তরে রাফায়েলের মা মাথায় হাত দিয়ে মাই গড বলে সংজ্ঞা হারালেন। কিন্তু তার বাবা অজ্ঞান হলেন না।
দিন কয়েকের ব্যাবধানে রাফায়েল নিজের ঘরে দাসীর জীবনে পতিত হলো। এর আগে তার বাবা শেষবারের মত তাকে সুযোগ দিয়ে বলেছিলো, এখনো সময় আছে। তুমি ফিরে আসো রাফায়েল।
কিন্তু রাফায়েল ছিলো তার খোদার প্রতি অগাধ আস্থাশীল। সে হাসিমুখে বাবার প্রস্তাব নাকোচ করে দিলো এবং কোনরকম অভিযোগ ছাড়াই নিজের ঘরে দাসীর জীবন বেছে নিলো।
অন্ধকার থেকে আলোর পথে প্রত্যাবর্তনের এই গল্প বলার এক পর্যায়ে রাফায়েল জানালো মুসলিম হিসেবে তার জীবনের প্রথম রমজানের অভিজ্ঞতা।
আমি ঐদিন খুব-ই আনন্দিত ছিলাম। কারন মুসলিম হিসেবে সেটা আমার জীবনের প্রথম সিয়াম পালন ছিলো। কিন্তু আমার এই আনন্দ আমার মায়ের অন্তরে বিষ হয়ে ধরা দিলো৷ সেদিন আমাকে দিয়ে অন্যান্য দিনের তুলনায় আরো বেশি কাজ করানো হলো। এক পর্যায়ে রোজা ভাঙার জন্য আমাকে জোর করা হলো। একটা সময় এমন হলো, মায়ের কিল আর ঘুষিতে আমার সামনের চোয়ালের একটি দাত ভেঙে গেলো!
রাফায়েলকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তখন কি আপনার মা বাবার প্রতি আপনার রাগ হয়নি? তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার চিন্তা মাথায় আসেনি?
জবাবে রাফায়েল জানালো, ইসলাম পড়ে আমি জেনেছি এখানে আল্লাহর পরেই পিতা মাতার স্থান। কোন অবস্থাতেই তাদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করা যাবে না। সর্বদা উত্তম আচরণ করতে হবে। আমি সেটা করার-ই চেষ্টা করি।
ধর্মান্তরের পর রাফায়েলের নাম রাখা হলো রাবেয়া।অবসর সময় পেলেই রাবেয়া তার প্রভুর সেজদায় লুটিয়ে পড়তো। জোড়া হাতে প্রাণপণে চাইতো আল্লাহ যেন তার পরিবারের সবাইকে হেদায়েত দান করেন। তারাও যেন ইসলামের ছায়াতলে জায়গা পায়।
আল্লাহ পাক রাবেয়ার এই মনভাসনাকে ঝুলিয়ে রাখলেন না। দুই বছরের মধ্যে-ই তার ছোট বোন কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলো। তার দু মাস পরে রাবেয়ার মা এবং তার ছ মাসের মধ্যে-ই আল্লাহর হেদায়েত তার বাবার উপর নাজিল হলো।
আলহামদুলিল্লাহ এখন তাঞ্জানিয়ার ঐ গোড়া খৃষ্টান পরিবারটি একটি পুরোপুরি প্রেক্টিসিং মুসলিম পরিবার হিসেবে বসবাস করছে।
সত্যমনা লেখক
Monir Hossain.
তথ্য সূত্রঃ www.parstoday.com
আলহামদুলিল্লাহ
উত্তরমুছুন