প্রশ্নোত্তরে সত্যমনা (১)
উত্তরঃ হ্যা ঠিকই বলেছেন, অনেকেই দাবি করে, কোরআন এটা বলেছে। তবে শুধু দাবিটা শুনলেই হবে! কেন দাবী করে? তাদের যুক্তি কী? সেটাও তো জানতে হবে, তাই না!
এটা নিয়ে নাস্তিকদের আছে খুবই হাস্যকর যুক্তি,, নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখতে তারা কী না করতে পারে! এই উত্তরটা দেয়ার পূর্বে তাদের পরিভাষায় আজকের অাবোহাওয়া বার্তাটা দিয়ে নেই, ❝আজকে পৃথিবী উদয় হয়েছে ৫.৪৯ মিনিটে আর পৃথিবী অস্ত যাবে ৬.১৭ মিনিটে।❞
আপনারা ভয় পাবেন না! এটা নাস্তিকীও পরিভাষা, তাদের মতে এটা হওয়াই যুক্তিযুক্ত। অর্থাৎ যেহেতু উদায়াস্তের সাথে সূর্যের কোন সম্পর্ক নেই বরং পৃথিবীই মূলত উঠানামা করে তাই সূর্যাদোয়,সূর্যাস্ত না বলে পৃথিবী উদয় পৃথিবী অস্ত বলাই উচিৎ, ভাবছেন মজা করছি!
না, এমন কিছু যুক্তি দিয়েই তারা কোরআনের কিছু আয়াত ভুল প্রমানিত করতে চেয়েছে। আয়াতগুলো হচ্ছে, যথাক্রমেঃ
১/(ইব্রাহিম আঃ বাবেলের বাদশা নামরুদ ইবনে কানয়ানকে চেলেঞ্জ করে) বললেনঃ আল্লাহ তো সূর্যকে পূর্বদিক থেকে উদিত করেন, তুমি পারলে পশ্চিমদিক থেকে উদিত করে দেখাও। আল বাকারা-২৫৮
২/অতঃপর যখন তিনি (ইব্রাহিমঃ) সূর্যকে চকচকে অবস্থায় উদিত হতে দেখলেন তখন বললেনঃ এটা নিশ্চয়ই আমার রব, এটা সবচেয়ে বড়। অতঃপর যখন তা অস্তমিত হলো তখন বললেনঃ হে আমার সম্প্রদায়!তোমরা যেসব বিষয়ে শিরিক করো আমি তা থেকে মুক্ত। আল আনআম-৭৮
এরকম সূর্যাস্ত,সূর্যাদয় সংক্রান্ত আরো কিছু আয়াত আছে। [১]
তাদের যুক্তি হলো এখানে আল্লাহ পৃথিবীর উদয়াস্ত না বলে সূর্যের উদয়াস্তের কথা বলছেন। তার মানে কোরআন বলছে সূর্যই উঠানামা করে পৃথিবীর চারদিকে। আর এটা হলো অবৈজ্ঞানিক।
এখন আমরা দেখবো পৃথিবীর কোন ভাষায় নাস্তিকদের এই পরিভাষা ব্যবহার করা হয়। আমাদের আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিতেও (sunrise – sunset) কোরআনের পরিভাষা-ই ব্যবহার করা হয়। [২] এমনকি পৃথিবীর সব ভাষাতেই কোরআনের সেই (সূর্যোদয় সূর্যাস্ত) পরিভাষা ব্যবহার করা হয়। নাস্তিকিও পরিভাষা নয়।
কারণ এটা প্রচলিত রূপকার্থে পরিণত হয়েছে, আর রূপকার্থের মধ্যে তার প্রকৃতার্থ উদ্দেশ্য নেওয়া হয় না। যেমনঃ আইনের হাত অনেক লম্বা। প্রকৃতভাবে দেখতে গেলে আইনের তো হাতই নেই, তা লম্বা হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
সূর্যাস্ত – দিনের শেষে পশ্চিম দিগন্তে ‘সূর্যের অস্তমন।’- বাংলা একাডেমি। [৩]
২/ভোর বলতে বোঝায় দিনের একটি অংশবিশেষ যখন ‘সূর্য উঠতে শুরু করে।’ ভোর বেলায় ‘সূর্যের উদয়ের সময়ে’ পরিবেশে মৃদু সূর্যালোক ছড়িয়ে পড়ে। তবে এসময় সূর্য দিগন্তের নিচে অবস্থান করে। ভোড় এবং ‘সূর্যোদয়’ এক ব্যাপার নয়। সূর্যোদয় হল যখন ‘সূর্যের একাংশ দিগন্তের উপরে চলে আসে’ এবং তা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে ওঠে। ভোরবেলা সূর্য দেখা না গেলেও সূর্যের অবস্থান কোনদিকে – তা বোঝা যায়।
কী হলো! কোরআনের ভুল ধরার আগে তো নাস্তিকদের বাংলা একাডেমি ও উইকিপিডিয়ার ভুল ধরা উচিৎ ছিল। তারাও দেখছি একই পরিভাষা ব্যবহার করেছে। নাস্তিকদের যে কোরআনের সাথে কেন এত শত্রুতা বুঝি না বাপু!
পরিশেষে তাদের এ আবদার ‘কোরআনের একটা ভুল মেনে নাও না প্লিজ’ রক্ষার্থে যদিও এটা মেনে নেই যে কোরঅানে পৃথিবীউদয়, পৃথিবীঅস্ত বলাই উচিৎ ছিল, তবুও কি বাংলা একাডেমি ও ভাষা বিজ্ঞানীরা তা মেনে নিবে!!
রবিউল ইসলাম,
লেখক ও গবেষক, সত্যমনা ব্লগ ।
তথ্য সূত্রঃ
COMMENTS