প্রশ্নোত্তরে সত্যমনা (৪)
سَابِقُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ
(আল হাদীদ – ২১) [১]
وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ
(আল ইমরান – ১৩৩) [২]
প্রশ্নঃ নাস্তিকরা এই উভয় আয়াত নিয়ে ঢালাওভাবে প্রচার করে বেড়ায় যে কোরআনের আয়াত পরস্পর স্বাঙ্ঘর্সিক। জান্নাতের প্রশস্ততার ব্যপারে কোরআন দুই কথা বলে। এক জায়গায় এক আসমান আরেক জায়গায় বহু আসমান। অর্থাৎ একই প্রশস্ততা বুঝতে গিয়ে আসমান শব্দটি কোরআন এক জায়গায় একবচন অন্য জায়গায় বহুবচন ব্যবহার করেছে। – রায়হান আহমাদ।
উত্তরঃ নাস্তিকদের কিছু দুর্বলতা আছে, আত্নগোড়ামির কারণে যার অনুভূতি তাদের অনুভূত হয় না। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো অপজিট জ্ঞানহীনতা। প্রতি পক্ষীও ব্যাসিক জ্ঞানটুকুও না থাকা। যার বহিঃপ্রকাশ নাস্তিকদের এই শিশু সুলভ আপত্তি। উপরে উল্লেখিত দাবিটা হলো, কোরআনের এই আয়াতে السماء শব্দটি একবচন ব্যবহৃত হয়েছে, এবং অমুক আয়াতে السماوات বহুবচন ব্যবহৃত হয়েছে। এটা কি সাঙ্ঘর্সিক না!
এই আপত্তি নিঃসন্দেহে কপি করা। কারণ নিজের পায়ে নিজে কে কুড়াল মারবে বলুন!! যে শব্দটাকে তারা একবচন ভেবে ভুলের এই মহা অট্টালিকা নির্মান করেছে তার ভিত্তি যে মহা শুন্যে সে খবর তাদের থাকার কথাও না।
আরবি মিডিয়ামের প্রাথমিক পর্যায়ের একটি বাচ্চাও বলে দিতে পারবে, একবচনের নিয়মাবলী। السماء শব্দটি (ال) যুক্ত। আর(ال) যুক্ত কোন শব্দ যে কোখনোই একবচন হয় না সেটা এই মূর্খদের বুঝাই কী করে?
তবুও বলছি……(ال) শব্দটি প্রধানত চার জায়গায় ব্যবহৃত হয়। এখানে ال جنسی (জাতিবাচক অব্যয়) হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ السماء শব্দটি এখানে জাতিবাচক। যেমন একটি কলম একবচন। এর অধিক বহুবচন। কিন্তু আমি কলম পছন্দ করি। এখানে কলমটি না একবচন না বহুবচন। বরং জাতিবাচক। [৩]
এজন্যই বলি- আদার বেপারিদের জাহাজের খবর না নেওয়াই ভালো।
তাদের যদি আরবি ব্যকরণ সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা থাকতো! তাহলে এই ভুলের কারণে লজ্জায় মরে যেতে চাইতো। আসলে কোরআন সম্পর্কে তাদের অধিকাংশ আপত্তি হয় এই টাইপের। কখনো প্রেক্ষাপট না জানার কারণে, কখনো ব্যাখ্যা (তাফসীর) না জানার কারণে আবার কখনো বা এই আপত্তির মতো ব্যকরণ না জানার কারণে। তারা কোরআন সম্পর্কে কী বা জানে? শুধুমাত্র আরবি ব্যকরণটাই পাঁচটি পৃথক শাস্ত্রে বিস্তৃত।
শাস্ত্রীয় আরবী ব্যাকরণের জন্য ব্যাকরণ-বিজ্ঞান পাঁচটি শাখায় বিভক্ত:
আল-লুগাত ( اَللُّغَة ) : (ভাষা / অভিধান) শব্দভাণ্ডার সংগ্রহ এবং ব্যাখ্যা করার সাথে সম্পর্কিত।
আত-তাসরিফ ( اَلتَّصْرِيف ) : (রূপচর্চা) পৃথক শব্দের ফর্ম নির্ধারণ।
আন-নাহব (اَلنَّحْو ) : (বাক্য গঠন) বাক্যে ব্যবহৃত শব্দ সমুহের শেষে ‘ইরাব’ প্রদান সম্পর্কিত ।
আল-ইশতিকাক (اَلاشْتِقَاق ) : (উদ্ভূত) শব্দের উৎস নির্ধারন ।
আল-বালাগাত ( اَلْبَلَاغَة ) : (অলঙ্কারশাস্ত্র) যা শৈলীগত গুণ বা স্পষ্টতাকে বিশদ করে। [৪]
এ সাব্জেক্টগুলো পড়া তো দূরের কথা! কখনো বোধহয় নামও শোনেনি। সুতরাং ভুল ধরার পূর্বে কমসেকম বেসিক জ্ঞানটুকুন অর্জন করে নিন।
রবিউল ইসলাম।
লেখক ও গবেষক,সত্যমনা ব্লগ।
তথ্য সূত্রঃ
[১] আল হাদিদ- ২১
[২] আল ইমরান- ১৩৩
[৩] হেদায়াতুন নাহু। কাফিয়া।
[৪] উইকিপিডিয়া।
COMMENTS