প্রশ্নোত্তরে সত্যমনা (৩)
মহামারীর এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে “প্রচারণা” ও একটি সেবা। যেমন- সাধারণ মানুষকে সচেতন করা, তাদের অবশ্য করণীয় ও বর্জনীয় বাতলে দেওয়া ইত্যাদি। এ কাজের জন্য তারা প্রশংসাযোগ্য।
কিন্তু একই কাজ করে কেউ নিন্দিত ও শাস্তিযোগ্য। পার্থক্যটা শুধু ‘অপ’ দুইটি অক্ষরের মধ্যে। প্রচার, অপঅপ্রচার।
বিদ্বেষবসত ইসলামের কিছু বিষয়গুলো নিয়েও অপপ্রচার করছে একদল মানুষ। সাধারণ মানুষকে কোরঅান-হাদিসের ভেতরটা লুকিয়ে দেখানো হচ্ছে উপরের কিছু স্বার্থোদ্বারী শব্দমালা।
তো সেটা না হয় পরেই বলি। শুরুতেই আমরা জেনে নেই ইসলাম ছোঁয়াচে রোগ সম্পর্কে কী বলে?
বনু সাকিবের একজন কুষ্টরোগী রসূল (সঃ) এর কাছে বায়াত গ্রহণ করতে আসছিলেন। তখন রসূল (সঃ) লোক পাঠিয়ে তাকে বলে দিলেন যে, তুমি ফিরে যাও। আমরা তোমার বায়াত গ্রহণ করে নিয়েছি। [১]
আরেক হাদিসে রসূল (সঃ) বলেছেনঃ রোগ সংক্রমণকারী এমন রোগীকে যেন সুস্থ ব্যাক্তির নিকট আনা না হয়। [২]
এখানে স্বার্থোন্নাষীদের এটা বলার অবকাশ নেই যে তিনি এখানে ছোঁয়াচে রোগের কথা বলেননি, কারণ হাদিসে আরবি স্পষ্ট শব্দতে (মুমরিদ) বলা হয়েছে যার অর্থ সংক্রমণকারী রোগ। কিংবা এ কথা বলারও সুযোগ নেই যে, অসুস্থ রোগীর প্রতি অমানবিকতা প্রকাশ করেছেন। কেননা ভিন্ন একাধিক হাদিসে রসূল (সঃ) সাধারণ রোগী দেখতে যাওয়ার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। সুতরাং এই হাদিসটি ছোঁয়াচে রোগ সংক্রান্তই।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো যে রসূল (সঃ) প্লাগের (দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এমন মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি) সময় কী করণীয় এর ফর্মুলাও সাজেস্ট করে গেছেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে যেই ফর্মুলাকে গোটা বিশ্ব প্রধান কার্যক্রম হিসাবে গ্রহণ করেছে।
রসূল (সঃ) বলে গেছেনঃ তোমরা যখন কোন অঞ্চলে প্লাগের বিস্তারের সংবাদ পাবে,তখন সেই এলাকায় প্রবেশ করবে না। আর যদি তোমাদের এলাকাই তা হয়, তাহলে সেখান থেকে বের হবে না। [৩]
আসলে তাদের কোরআন হাদিসের নুন্যতম জ্ঞান না থাকা সত্বেও তারা কোন বিষয় পেলেই ইসলামের উপর ‘পুঁটি মাছ পাই না,একটা যদি পাই ওমনে ধরে গাপুস-গুপুস খাই’ টাইপের আক্রমণ করে বসে।
তারা তাদের দাবির সপক্ষে এ হাদিসটি উল্লেখ করেঃ রসূল (সঃ) বলেছেনঃ রোগের সংক্রমণ ও অশুভ লক্ষ্মণ বলতে কিছু নেই।
যারা এরূপ বলে তারা আসলে ৫০০ টাকার নোটের শুন্য চেপে ধরে ৫০ টাকা দেখায়। কেননা এ হাদিসেরই শেষাংশ হলো তোমরা কুষ্ঠরোগীর থেকে পলায়ন করো যেমন বাঘ থেকে পালিয়ে থাক। [৪]
তাহলে রসূল (সঃ) রোগের সংক্রমণ নেই বললেন কেন?? কারণ জাহিলিযুগ ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন যুগ। এ হাদিসে তারই মূলোৎপাটন করা হয়েছে। সে সময় কুলক্ষ্মণের বিশ্বাস, পেঁচা ও সফর মাস সম্পর্কে নানাবিধ অবান্তর কথাবার্তা প্রচলিত ছিল,এবং যে কোন রোগকেই ছোঁয়াচে মনে করা হত। তারা মনে করতো রোগীর কাছে গেলেই বুঝি রোগ হবে। যার ফলে সমস্ত রোগীর প্রতি অমানবিক আচরণ করা হতো। একজনের রোগ হলেই অন্যজনকে দোষারোপ করা হতো।
অথচ সাধারণ যুক্তিও বলে রোগীর কাছে গেলেই যে রোগাক্রান্ত হবে, কিংবা জীবানু সংক্রমিত হওয়ার মানেই যে রোগ সংক্রমিত হওয়া বিষয়টি এমন নয়।
মূলত সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছামতই সবকিছু হয়। তিনি না চাইলে রোগীর সংস্পর্শে থেকেও রোগ হয় না। আবার তিনি চাইলে রোগীর সংস্পর্শে না থেকেও রোগ হয়। এরকম আমরা প্রায়ই দেখে থাকি। যে ব্যাপারে যুক্তি দিয়ে রসূলও (সঃ) বলেছিলেনঃ তাহলে প্রথম রোগীকে সংক্রমিত করলো কে??
রসূল (সঃ) এ সামগ্রিক দিক বিবেচনায় ও সমস্ত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বলেছিলেনঃ পুরো হাদিসটি – রোগের মধ্যে (তোমাদের ধারণার মতো) কোন সংক্রমন শক্তি নেই।(আল্লাহই যাকে ইচ্ছা সংক্রমিত করেন) অশুভ লক্ষ্মণ বলতে কিছু নেই। সফর মাসের মধ্যে অমঙ্গলের কিছু নেই। পেচায় কোন অশুভ লক্ষ্মণ নেই। এবং তোমরা কুষ্ঠরোগী থেকে পলায়ন করো (কেননা কুষ্টরোগ প্রকৃত পক্ষে সংক্রমণকারী রোগ) যেমন বাঘ থেকে পালিয়ে থাক। [৫]
বস্তুত এখানে বুঝাই যাচ্ছে এই হাদিসে বেশকিছু কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে। যার থেকে এটাও স্পষ্ট যে, রোগের মধ্যে তারা যে অলীক ও অবান্তর সংক্রমণের ধারণা পোষণ করত সেই কুসংস্কার নাকচ করাই এখানে উদ্দেশ্য। কেননা রোগের মধ্যেও যে সংক্রমণকারী বিভিন্ন রোগ আছে সেজন্য তিনি সাথে সাথে এও বলে দিয়েছেন – তোমরা কুষ্ঠরোগী থেকে পলায়ন করো যেমন বাঘ থেকে পালিয়ে থাক।
COMMENTS