মিথ্যা বৈষম্যের বেড়াজাল।
সাদমানকে আরবি পড়াতে আসে তার হুজুর। হুজুর হলেও সাদমান তাকে স্যার বলেই সম্বোধন করে। এতে অবশ্য কারো কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। কারণ শিক্ষক হিসেবে সম্বোধন করা ‘স্যার’ ‘হুজুর’ শব্দগুলোর অর্থ একই। সাদমানের ছটফটে স্বভাবের সাথে সাথে কিছু টেলেন্টেড স্বভাবও রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো প্রশ্ন করা। কোন কিছু শুনলে তা নিয়ে প্রশ্ন সে করবেই। আর দু’একটা নয়, অসংখ্য অসংখ্য।
কথায় আছে না ‘কোন কিছু-ই অতিরিক্ত ভালো নয়।’ সেজন্যই হয়তো বা তার এই গুণকে কেউ টেলেন্ট হিসেবে না দেখে দোষ হিসেবেই দেখে।
কিন্তু সাদমানের স্যার তা মনে করে না তিনি সেটাকে টেলেন্ট-ই ভাবেন। ছেলেমানুষির কারণে-ই এই অতিরিক্ততা ও কিছু আবলতাবল প্রশ্ন আর কি। বড় হলে যা থাকবে না।
নামাজ শেখার সময় একদিন হাত নাভীর নিচে বাঁধা নিয়ে সাদমান তার স্যারকে এক অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসলো, আচ্ছা স্যার আমি নাভীর নিচে হাত বাঁধবো কেন? আম্মুকে তো দেখেছি বুকে হাত বাঁধতে। ম্যাডামও তাই বলেছে। মুসকি হাসি দিয়ে স্যার বললো, মেয়েরা বুকেই হাত বাঁধে সাদমান। তুমি তো ছেলে তাই নাভীর নিচে হাত বাঁধবে। কিন্তু পরক্ষণেই স্যারকে হতভম্ব করে দিয়ে সাদমান বললো, আচ্ছা স্যার আপনারা ছেলে মেয়ের মাঝে বৈষম্য করলেন কেন?
ছেলে মেয়ের মাঝে এমন বৈষম্য করা তো ঠিক নয় স্যার।
স্যার বিষয়টাকে হজম করতে পারলো না। এর নিশ্চয়ই কয়েকটি কারণ ছিল যা এক্ষুনি বুঝা যাবে। স্যারও তাকে একটি অদ্ভুত প্রশ্ন করলো,
আচ্ছা সাদমান বৈষম্য মানে কী? স্যার আগে থেকেই জানত সাদমান এর উত্তর দিতে পারবে না। কারণ ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ার কারণে বাংলা শব্দার্থ খুব কমই আত্মস্থ করেছে সে। ‘মোটামুটি কঠিন’ এমন বাংলা শব্দার্থ বুঝতেও তার কষ্ট হয়।
কিন্তু স্যার অবাক হয়েছে হাত বাঁধার এমন সিম্পল একটা বিষয়ে সাদমান এত ভয়ংকর একটা শব্দ কী করে ব্যবহার করলো। যার অর্থ পর্যন্ত সে ভালোভাবে জানে না। ‘ডিফারেন্স’
শব্দটা তার জন্য পার্ফেক্ট। যেহেতু সে ইংলিশ মিডিয়ামের। তার চেয়ে বেশি হলে ‘পার্থক্য’ বলবে, কিন্তু এগুলোকে ছাপিয়ে ডায়রেক্ট বৈষম্য!
যার প্রকৃত অর্থ- অসমতা। হাত বাঁধার বিষয়ে অসমতার প্রশ্ন আসবে কী করে! এখানে কি কারো অধিকার খর্ব করা হয়েছে নাকি কাউকে কষ্টে ফেলা হয়েছে?
স্যার বুঝতে বাকি রইল না যে, হয়তো সাদমানের স্কুলে কোন নারীবাদী শিক্ষক রয়েছে যার বৈষম্য শব্দতে এলার্জি আছে। যার কারণে যে কোন পার্থক্য বুঝাতেই তিনি বৈষম্য শব্দটি ব্যবহার করে তীব্র সুখ অনুভব করেন।
স্যার বললো, সাদমান এটাকে তুমি বৈষম্য বলছো কেন? ছেলে মেয়ের মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে না!? এই যেমন ধরো, তোমাকে যদি আমি মেয়ে বলে সম্বোধন করি তাহলে কেমন হবে?
উত্তর দেয়ার পরিবর্তে সাদমান প্রশ্ন করে বসলো, সম্বোধন মানে কী স্যার? স্যার পূর্বেকার মতো এবারো ইংরেজি শব্দ কিংবা বাংলা সহজ শব্দ বলে বুঝিয়ে দিলো৷ পরক্ষণেই ভ্রূ কুঁচকে সাদমান বললো, কেন স্যার আমি তো মেয়ে নই। আমি তো ছেলে। তাহলে কেন আমাকে মেয়ে বলে ডাকবেন। সাদমানকে বুঝানোর মোক্ষম সুযোগ পেয়ে স্যার বললো তুমি এখন ছেলে মেয়ের মাঝে বৈষম্য করছো কেন? ছেলে মেয়ের জন্য কেন এই ভিন্ন শব্দ সাদমান। এটা কি বৈষম্য নয়। সাদমান কিছুটা কনফিউজড। মাথা চুলকাচ্ছে। তার এই মাথা চুলকানি থামিয়ে দিয়ে স্যার বললো সাদমান এগুলো আসলে বৈষম্য নয়। পার্থক্য মাত্র। যা মানুষের মধ্যে হরহামেশাই থাকে। ছেলে মেয়ে তো দূরের কথা তোমার আমার মধ্যেও অসংখ্য পার্থক্য রয়েছে। যেমন তুমি ছোট, আমি বড়। তুমি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়, আমি বাংলা মিডিয়ামে পড়ি। এই পার্থক্য দোষের নয় সাদমান। অবস্থা ভেদে যারা যার সুবিধার্থে-ই এই ডিফারেন্স।
চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে সাদমান বুঝেছে। আর স্যারও সেটা ভালো করে জানতো। কারণ মিথ্যাবুঝ দিয়ে যে, সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না।
সত্যমনা লেখক – Robiul Islam. পেইজ- সত্যমনা।
COMMENTS