দাস মানেই ছিল সমাজের সবচে অবহেলিত মানুষ। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ও কনকনে শীতে আঞ্জাম দিতে হতো মালিকের কাজ। সামান্য আহার ও ছেঁড়া কাপড়ে কাটতো দিন রাত। এভাবে বলা যায়, দাস মানেই ছিল শুধু দেখতে মানুষ।
ইসলাম এসে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে ঐ দাসপ্রথাকে। দাস আর প্রভূর মাঝে জুড়ে দিয়েছে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন৷
১/ দাসরা তোমাদের ভাই। তোমরা যা খাও, তোমাদের ভাইদেরকে তা-ই খাওয়াও। তোমরা যা পরিধান করো, তোমাদের ভাইদেরকে তা-ই পরিধান করাও। তোমরা সাধ্যের বাইরে কোন কাজ করিয়ে নিও না। যদি নিতে হয় তাহলে তোমরাও তাদের সাথে করো।
( বুখারী ৬১৫০, মুসলিম ১৬৬১, আবু দাউদ ৫১৫৮ ইবনে মাজা ৩৫৯০)
২/ এমনকি দাসকে দাস বলে সম্বোধন করো না। বলো, আমার ছেলে, আমার মেয়ে। আমার ভাই, আমার বোন। বেশি থেকে বেশি আমার খাদেম।
( বুখারী ২৫৫২)
৩/ অনেক স্কলার এটাকে মাকরূহ বলেছেন। যেটা কিনা হারামের নিকটবর্তী।
৪/ তাদেরকে শিক্ষাও প্রদান করা হতো। তারা যেন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে সমাজে মাথা উঁচিয়ে থাকতে পারে৷ এ ব্যাপারেও ইসলাম দিয়েছে তাগিদ।
( মুসলিম ৯৯৬, সহীহ ইবনে হিব্বান ৪২৪১)
যার ফলশ্রুতিতে দাসেরা সমাজে দাস হিসাবে পরিচিত হতো না। এমন অনেক দাসের ইতিহাস ইসলামে আছে, যারা শিক্ষা অর্জন করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদে নিযুক্ত ছিলেন।
১/ যায়েদ বিন হারিস রা.। তিনি ছিলেন রাসূলের দাস। কিন্তু সমাজ তাকে চিনতো রাসূল সা. এর পুত্র হিসেবে। তিনি মুতার যুদ্ধে চিফ অফ আর্মির স্টাফ ছিলেন।
তার পুত্র উসামা রা. বড় বড় সাহাবিদের উপরে জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন।
২/ ইবনে ওমর এর দাস এবং ওমর রা. এর দাস প্রফেসর অফ হাদিস সায়েন্স বা মুহাদ্দিস হয়েছিলেন।
৩/ দাস আতা ইবনে আবী রাহাভ রহ. হয়েছিলেন চিফ অফ জাস্টিস ইন মক্কা ( গ্রান্ড মুফতি)৷
৪/ ইবনে আব্বাস রা. এর দাস ইকরামা রহ. কে তিনি লেখাপড়া শিখাতেন। তিনি এতোটাই শিক্ষা অর্জন করেছেন যে, তাকে বলা হত বাহরুল উম্মাহ বা জাতীর বিদ্যাসাগর।
৫/ রাসূল সা. এর যুগে দাসেরা ইমামতির দায়িত্ব পালন করতেন। যেটা কিনা ছিল সবচে সম্মানিত কাজ। (বুখারি শরিফ ৫৩১)
১/ পূর্বের সমাজে স্বাধীন মানুষকে কেনা বেচা করা বৈধ ছিল। যা ইসলাম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। এমন কি এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
রাসূল সা. বলেছেন, কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তায়ালা তিন শ্রেণির মানুষের বিরুদ্ধে বাদী হবেন।
এদের মধ্যে এক শ্রেণি হলো, যারা স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করেছে। ( সহীহ বুখারী, খন্ড ৪ র্থ, পৃ ৮৮)
২/ কেউ ঋণ পরিষদে অক্ষম হলে তাকে দাস দাসী বানানো হতো।
যা ইসলামে বৈধ নয়।
৩/ অপহরণ করে দাস দাসী বানানো হতো। যা ইসলামে বৈধ নয়।
৪/ দরিদ্র লোকেদের দাস দাসী বানানো হতো। যা ইসলামে বৈধ নয়।
৫/ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসে যারা বন্দী হতো। তাদেরকেও দাস দাসী বানানো হতো। এই একটা মাত্র ক্ষেত্র ছাড়া ইসলামে দাস দাসী বানানোর কোন বিধান নেই। তবে হ্যাঁ, এখানেও ইসলাম মুক্তি দিয়েছে মানবতাকে। অক্ষুণ্ণ রেখেছে মানুষের মর্যাদাকে।
প্রাচীন রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় যুদ্ধবন্দীদেরকে হত্যা করা হতো। কিংবা দাস দাসী বানানো হতো।
(১) কিন্তু ইসলাম বলেছে, যদি তারা তোমাদের সাথে চুক্তি করে ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে। তাহলে অবশ্যই ছেড়ে দিবে। ওয়াদা রক্ষা করা ইসলামের অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিধান।
(২) যুদ্ধ বন্দীদেরকে ক্ষমা করে দাও। তাদেরকে বিনা মুক্তিপণে ছেড়ে দিবে।
(৪৭ঃ৪)
(৩) মুক্তিপণ নিয়েও ছাড়তে পারো। (৪৭ঃ৪)
(৪) যদি যুদ্ধে কোন লিডার বন্দী হয়। যাকে ছেড়ে দিলে আবার যুদ্ধের প্রস্তুতি নিবে। আবার হুমকি হয়ে ফিরবে। তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারো।
(৫) এ সব কিছুর পরে হলো দাসত্ব। অর্থাৎ যুদ্ধবন্দীদেরকে সৈনিকদের মাঝে বন্টন করে দেয়া। ইসলামের এই মহান ব্যবস্থাকে যে কোন নিরপেক্ষ মানুষ সাপোর্ট দিবে।
কারণ, আধুনিক বিশ্বের ব্যবস্থাপনার চেয়ে এ ক্ষেত্রে ইসলাম অধিক মানবিক।
যেমন:
১/ আজ আধুনিক কালে চিড়িয়াখানার পশুর মত যুদ্ধবন্দীদেরকে রাখা হয়।
২/ আধুনিক কালের ব্যবস্থাপনায় সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মানবিক অধিকার নিশ্চিত করা হয় না। কিন্তু ইসলামে এ সব অধিকার নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক।
৪/ বর্তমান বিনা শর্তে মুক্তি দেয়ার বিধান নেই। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় তা আছে।
৫/ জেলখানায় বিয়ের ব্যাবস্থা নেই। যা কতটা মানবীয় প্রয়োজন বুঝানোর দরকার নেই। কিন্তু ইসলামি রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় আছে।
এ থেকে বোঝা যায় ইসলাম কতোটা মানবিক ধর্ম। পৃথিবীর ইতিহাসে ইসলামের মতো শান্তির ধর্ম কখনো হয়নি, বর্তমানেও নাই, আগামীতেও হবে না।
সত্যমনা লেখক-
আহমাদ আব্দুর রাজ্জাক
সত্যমনা ডট কম __
COMMENTS