সমকামিতা।
→ সমকামিতা প্রথম হজরত লুত (আ:) এর কওম শুরু করে। [আ'রাফ ৮০, শুআরা ১৬৫]
→ আল্লাহ তায়া’লা কুরআনে সমকামী আচরণকারী লুত আ: এর সম্প্রদায়কে “সীমালঙ্ঘনকারী” (আরাফ ৮১, শুআরা ১৬৬) এবং “জাহিল সম্প্রদায়” (নামল ৫৫) বলে আখ্যায়িত করেছেন।
→ আল্লাহ তায়া’লা লুত (আ:) এর সম্প্রদায়কে অভিশাপ দিয়েছেন। [মুসনাদে আহমাদ ২৯১৫]
→ রাসুল (সা:) এর জবানে সমকামীরা “অভিশপ্ত”। [মুসনাদে আহমাদ ১৮৭৮]
→ সমকামী পুরুষদ্বয় কিংবা মহিলাদ্বয় উভয়েই ব্যভিচারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। [আল-বায়হাকী, শুআ'বুল ইমান: ৫০৭৫]
→ আল্লাহ তায়া’লা সমকামিতার অপরাধে লুত আ: এর সম্প্রদায়কে ৩ ধরনের শাস্তি দিয়েছিলেন:
১. বিকট আওয়াজ (হিজর ৭৩)
২. ভূমিসহ উঠিয়ে জমিনে উপুড় করে নিক্ষেপ (হিজর ৭৪) [এলাকা: ডেথ সি/ মৃত সাগর]
৩. পাথরের বৃষ্টি বর্ষন (আ'রাফ ৭৪, হিজর ৭৪)
→ ইমাম তিরমিযী সুনানে তিরমিযী-তে লিখেছেন যে, রাসূল সা সমলিঙ্গীয় সঙ্গমকারীদের উভয় সঙ্গীর জন্য মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিধান দিয়েছেন।
যারা সমকামিতায় লিপ্ত হবে, তাদের উভয়কেই হত্যা করার নির্দেশ রয়েছে হাদিসে। [সুনান আবু দাউদ, ৩৮:৪৪৪৭ (ইংরেজি), আল-তিরমিযী, ১৫: ১৪৫৬, ইবনে মাজাহ, ২০: ২৫৬১]
→ অবিবাহিত পুরুষ পুরুষের সাথে লিপ্ত হলে তাদেরকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করার নির্দেশ রয়েছে হাদিসে। [সুনান আবু দাউদ, ৩৮:৪৪৪৮ (ইংরেজি)]
উল্লেখ্য, এদের বিধানের ব্যাপারে স্কলারদের মধ্যে মতভেদ আছে। এখানে এটার ব্যাপারে হাদিসের অবস্থান খুবই শক্ত এটা বুঝাতে উল্লেখ করা হয়েছে।
→ অনেক মডার্ন স্কলারদের মতে, লুত আ এর উম্মতকে “সমকামিতা”র কারণে ধ্বংস করা হয় নাই, বরং বারবার নবীর অবাধ্যতা, জিনায় লিপ্ত হওয়ার প্রবল ইচ্ছা এবং সীমালঙ্ঘন করার কারণে ধ্বংস করেছেন। কিন্তু এইটা ভুল–
– আল্লাহ তায়া’লা ক্বওমে লুতের ঘটনা বর্ণনা করার সময় “সমকামিতা”র বিষয়টাই সবচেয়ে “স্পষ্টভাবে” ফোকাস করেছেন।
– সমকামিতাই তাদের সীমালঙ্ঘন করার প্রধান কারণ। (আ'রাফ ৮১, শুআরা ১৬৬)
– ক্বওমে লুতের ক্ষেত্রে “জিনা” বা “অশ্লীলতা” হিসেবে আল্লাহ তায়া’লা “সমকামীতা”কেই চিহ্নিত করেছেন। (আ'রাফ ৮০)
– সমকামিতার কারণেই আল্লাহ তায়া’লা কওমে লুতকে “জাহিল” আখ্যা দিয়েছেন। (নামল ৫৫)
এই বিষয়গুলো স্পষ্ট এবং হাদিস এই ব্যাপারটাকে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে। এবং ক্লাসিকাল কোনো ইসলামিক স্কলার এর বিপরীতে মত পোষণ করেন নাই।
→ অনেক মুসলিম এবং অমুসলিম জান্নাতে “গিলমান” থাকবে এই রেফারেন্স দিয়ে এলজিবিটি বৈধ করতে চায়। ২০২১ সালে ডয়েচেভেলে নামক পত্রিকাতেও সাংবাদিকদের থেকে এই ধরনের লেখা প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু এইটা সম্পূর্ণ অপপ্রচার।
– জান্নাতে যদি সমকামিতা বৈধও হয়, তার মানে এই না যে দুনিয়াতেও এটা বৈধ। ইসলামের নীতিই হচ্ছে এটা– দুনিয়াতে “রব-চাহি” জীবনযাপন করবে, আর বিনিময়ে পরকালে এক “মন-চাহি” জীবন লাভ করবে। সেখানে হালাল-হারাম বলতে কিছু থাকবে না, যা থাকবে সবই হালাল এবং উপভোগ্য।
– গিলমানের আয়াতগুলোর কোথাও লেখা নেই কিংবা ইঙ্গিতও নেই যে তারা পুরুষদের চাহিদার জন্য প্রেরিত হবে। বরং তারা আসবে “সেবক” হিসেবে- সেবা করার জন্য।
– একজন “পূর্ণ কিশোর” এর সাধারণত শারীরিক যেসকল সৌন্দর্য এবং বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে, আল্লাহ তায়া’লা সেগুলোই সুন্দর করে উল্লেখ করেছেন ; উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা বুঝানো যে এরা চিরকিশোর, কখনও যৌবন ফুরাবে না, চিরকাল এরা জান্নাতিদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে।
তাফসীরে তাবারিসহ অনেক বিখ্যাত তাফসীরেই বিস্তারিত লেখা আছে। বাংলায় দরকার হলে তাফসীরে ইবনে কাসীরের ৭৬:২২, ৮৪:১৫, ৫২:২৮ প্রভৃতি আয়াতের ব্যাখ্যা দেখতে পারেন।
[বিঃদ্রঃ আরবি ( غلام (جمع– غلمان অর্থ কিশোর, বহুবচন গিলমান]
উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদ তো বলেই ফেলেছিলেন যে, “যদি আল্লাহ তায়া’লা কুরআনে লুত সম্প্রদায়ের ঘটনা বর্ণনা না করতেন তাহলে আমার বিশ্বাসই হতো না যে কোনো পুরুষ পুরুষের সাথে এমন করতে পারে!” [তাফসিরে ইবনে কাসীর]
→ ...রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আমি যে কুকর্মটি আমার উম্মাতের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সর্বাধিক ভয় করি তা হল লুত সম্প্রদায়ের কুকর্ম। [তিরমিজি ১৪৫৭, ইবনু মাজাহ ২৫৬৩]
শেষ হাদিসটার বাস্তবতা বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালেই স্পষ্ট দেখতে পাই আমরা।
ট্রান্সজেন্ডার।
→ হিজরা এবং ট্রান্সজেন্ডার এর আইন ইসলামে অবশ্যই ভিন্ন। হিজরা যেটাকে শরিয়তে خنثي বলে অভিহিত করা হয়েছে। আর ট্রান্সজেন্ডার আগে ছিল না, এখানে “পুরুষের মেয়েদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা” এর বিষয়ে যে হুকুম আছে সেটা প্রয়োগ হবে। এই ধরনের পুরুষকে শরিয়তে مخنث বলে অভিহিত করা হয়েছে।
→ ইমাম আন-নববী তার মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে লিখেছেন:
একজন মুখান্নাস হল সেই ব্যক্তি (পুরুষ) যে তার চালচলনে এবং বেশভূষায় নারীর বৈশিষ্ট্য বহন করে। এঁরা দুই ধরনের; প্রথমটা হলো যাদের মধ্যে এই স্বভাব অন্তর্নিহিত, সে নিজে নিজেই এগুলো নিজের মাঝে ধারণ করে নি, এতে কোন দোষ, কোন দোষারোপ বা কোন লজ্জা নেই, যতক্ষণ না সে কোন অনৈতিক কাজ করে বা টাকা উপার্জনের নিমিত্তে এই বৈশিষ্ট্যের সুবিধা নেয় (পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি)। দ্বিতীয়টা হলো অনৈতিক কারণে মহিলাদের মত আচরণ করে এবং সে পাপী ও দোষারোপের যোগ্য।
→ “নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করা পুরুষ” এবং “পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করা নারী”– এদের রাসূল (সা) অভিশাপ দিয়েছেন। [বুখারী ৫৫৪৬, আবু দাঊদ ৪০৯৮]
→ রাসুল (সা:) “নারীর সাদৃশ্য অবলম্বনকারি পুরুষ” এবং “পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারি নারী”– এদের ঘর থেকে বের করে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। [বুখারী ৫৮৮৬ (ইংরেজি)]
→ আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করা— এটাকে কুরআনে স্পষ্টত শয়তানের ধোঁকা (নিসা ১১৯) বলা হয়েছে এবং এদের স্থান “জাহান্নাম” (নিসা ১২১)। আর পুরুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করার পর অন্য লিঙ্গে রূপান্তরিত হওয়া— এটা স্পষ্টই আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করারই নামান্তর এবং এব্যাপারে স্কলাররাও একমত।
পয়েন্ট।
১. এলজিবিটি ইসলামে একটি “নিষিদ্ধ” এবং “অভিশপ্ত” কর্ম, এ ব্যাপারে সকল সাহাবি এবং ক্লাসিকাল ইসলামিক স্কলারগণ একমত। যদিও শাস্তি কেমন হবে সে ব্যাপারে এখতেলাফ রয়েছে।
২. “ইসলামি খেলাফত”,“রাজতন্ত্র”,“মুসলিমপ্রধান অঞ্চল”... এই প্রত্যেকটা টার্ম ভিন্ন এবং এদের অর্থ উদ্দেশ্যও ভিন্ন। মুসলমানদের জন্য অনুসরণীয় হচ্ছে রাসূল (সা:) এবং খুলাফায়ে রাশিদিনের জমানা। সুতরাং ইসলামি আইনের ও রীতিনীতির ক্ষেত্রে এই সময়কালটাই বিবেচ্য হবে। সুতরাং শরিয়া আইনের রেফারেন্স হিসেবে উক্ত সময়কাল ব্যতীত ইসলামের ইতিহাসের অন্য কোনো কালের আইন কিংবা আমল রেফারেন্স হিসেবে বিবেচিত হবে না।
৩. এলজিবিটি একটা মানসিক ব্যাধি এবং এটা যে ন্যাচারাল না সেটা প্রমাণিত। সুতরাং একটা মারাত্মক ব্যাধিকে “স্বাভাবিক আচরণ” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর এটা স্বাভাবিকিকরণ যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এটা আমরা প্রথম পর্বে দেখেছি। আগে দাবি করা হতো যে যেহেতু প্রাণীদের মাঝে এইটা ন্যাচারালি দেখা যায়, তাই মানুষের ক্ষেত্রেও ন্যাচারাল— এই যুক্তি দুইভাবেই ইনভ্যালিড। প্রাণীদের মধ্যে ন্যাচারালি দেখা যায় বিধায় যে মানুষের মাঝেও এটা ন্যাচারাল, এইটা লজিক্যালি ইনভ্যালিড। আর সম্প্রতি সাইন্টিফিক রিসার্চেও দেখা গেছে যে এইটা ন্যাচারালি না। [1][2][3][4]
৪. আমাদের ক্ষুদ্রতর দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে কোনো কিছু খারাপ মনে হলেও আসলেই তা অমঙ্গল কিনা সেটা আমরা কখনো নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না। আবার সব তথ্য ও সার্বিক জ্ঞান আমরা গ্রহণ ও প্রসেস করতে না পারার কারণে সার্বিকভাবে কোন কিছু আদৌ খারাপ বা অমঙ্গল হচ্ছে কিনা সেটাও আমরা সঠিকভাবে স্বভাবতই জানতে পারি না। সুতরাং “আমার কাছে এইটা খারাপ মনে হচ্ছে, তাই এটা খারাপ” এই ধরনের যুক্তি ইনভ্যালিড।
৫. স্রষ্টার দিক থেকে দেখলে আমরা বুঝতে পারি, স্রষ্টা তথা সার্বিক সত্তা, কোনো জগৎ তথা ব্যক্তিসত্তার উপর নির্ভরশীল নন। কোনো পূর্বনির্ধারিত নিয়মের ওপর নির্ভরশীল না হওয়ার কারণে খোদা বা ঈশ্বরের পক্ষে কোন বেআইনি কাজ করা অসম্ভব। অর্থাৎ আল্লাহর সকল কর্মই নীতি-নিরপেক্ষ অর্থে সদা নৈতিক। স্রষ্টা হলেন সর্ব কল্যাণময়, পরম দয়ালু।
সত্যমনা লেখক, Nafe bin Mamun.
সত্যমনা ডট কম।
...
[1]📎https://www.nature.com/articles/d41586-019-02585-6
[2]📎https://www.science.org/content/article/genetics-may-explain-25-same-sex-behavior-giant-analysis-reveals
[3]📎https://www.harvardmagazine.com/2019/08/there-s-still-no-gay-gene
[4]📎https://geneticsexbehavior.info/what-we-found/
COMMENTS