দীপ্ত এখন বুঝতে শিখেছে। আস্তিক পরিবারে জন্ম নেয়া ছেলেদের মনে যেমন নিজ ধর্মের বা মতবাদের ব্যাপারে প্রশ্ন জাগে। ঠিক দীপ্ত'র মনেও তার নাস্তিক্যবাদ নিয়ে নানান প্রশ্নের হাতছানি শুরু হয়ে গেছে৷
দীপ্ত'র বাবা মাঝে মধ্যে ত্যানা প্যাঁচানো উত্তর দেয়ার চেষ্টা করে। আর একটু জটিল হলে বলে, আব্বু! তোমাকে পরে বলবো। কিন্তু সে 'পরে'টা আর আসে না। এমন অসংখ্য প্রশ্ন জমে আছে পুচকে দীপ্ত'র কাছে। বেচারা ছোট হলেও প্রশ্নগুলো ফেলে দেয়ার মতো নয়।
একদিন দুপুরে খেতে বসে বাবার মুরগির রান চাবানো আর গরুর হাড্ডি চোষার দৃশ্য দেখে, দীপ্ত বললো, বাবা! তুমি মাংস খাও কেনো?
বাবাঃ দীপ্ত! এটা আবার কেমন প্রশ্ন করলে আব্বু?
দীপ্তঃ কেন আব্বু, তুমিই তো কোরবানির সময় মুসলমানদেরকে পঁচা বলো! তারা কোরবানি করে, সে জন্য তাদেরকে ঘৃণা করো!! পশু জবেহকে অন্যায় বলো।
বাবাঃ আসলে আব্বু তুমি ছোট মানুষ। এতো কিছু বুঝবা না। আমরা পশুর মাংস খাই। কারণ, আমাদের বাবা মা আমাদেরকে ছোট বেলা থেকে এতে অভ্যস্ত করেছে৷
দীপ্তঃ তা বুঝলাম। যতোই হোক, এটা তো অন্যায়। আর তুমি এখন জেনে বুঝে এ অন্যায় করবে কেন? আবার তুমি আমাকেও এমন অন্যায় কাজে অভ্যস্ত করছো কেন?
বাবাঃ আসলে আব্বু, আমরা কোরবানির বিরোধিতা করি অনেকগুলো কারণে। যেমন, যারা প্রকাশ্যে এভাবে পশুর গলায় ছুরি চালাতে পারে৷ তারা ধীরে ধীরে হিংস্র হয়ে যায়। জানো, তারা এভাবে একদিন মানুষকেও জবাই দিয়ে দেয়!
দীপ্তঃ আচ্ছা বাবা, তাহলে কি আমার নয়ন কাকু ( সে একজন বিখ্যাত কশাই) হিংস্র? তিনিও কি মানুষকে জাবাই করে?
বাবাঃ তুমি বেশি কথা কও! চুপচাপ ভাত খেয়ে নাও। দীপ্তঃ ঠিক আছে বাবা।
একদিন বিকেলে দীপ্তর মাকে তার বাবা ধমক দিয়ে বলছিল, তুমি আমাকে না বলে দীপ্তর নানু বাড়ি কেন গিয়ে ছিলে?
দীপ্ত এই দৃশ্যটা দেখে ফেললো। বিকেলে মাঠে খেলতে বের হলো দীপ্ত৷ প্রতি দিন বিকেলে যে মুক্ত মন নিয়ে খেলাধুলা করে দীপ্ত, আজ আর সেই মুক্ত মন নেই। সারা বিকেল খালি এটাই চিন্তা করলো৷ কেন বাবা এভাবে আম্মুকে ধমক দিলো? মা না হয় বাবাকে বলে যাননি। তাই বলে কি এভাবে ধমকাবে? রাতে ঘুমানোর সময় দীপ্ত'র বাবা বললো, কিরে দীপ্ত! তোর কী হয়েছে আজ? কোন কথা বলছিস না যে?
দীপ্তঃ আচ্ছা বাবা, তুমিই তো বলেছিলে, মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা দেয়া উচিৎ।
যার যা ইচ্ছে করবে। মানুষ কারো গোলাম না।
বাবাঃ হুম৷
দীপ্তঃ তাহলে আম্মুকে আজ ধমক দিলে কেন? আম্মুকি তোমার দাসী যে, তোমার অনুমতি ছাড়া কিছু করতে পারবে না?
বাবাঃ সব বিষয়ে যুক্তি খোঁজ কেন? সব বিষয় প্রশ্ন করো না বুঝলে? বড় হলে বুঝবে।
দীপ্তঃ হুম বাবা।
এভাবেই একের পর এক প্রশ্ন তুলতে থাকে পুঁচকে দীপ্ত। পুঁচকে দীপ্তর আজব প্রশ্নগুলো গল্পকারে চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
সত্যমনা লেখক
আহমাদ আব্দুর রাজ্জাক
COMMENTS