অন্তরের অন্তস্তল থেকে খুব লজিক্যালি কথাগুলো বলার চেষ্টা করবো। আস্তিক-নাস্তিক যাই হই না কেন, আমরা তো মানুষ। কথাগুলো নিশ্চয়ই একটু খোলামনে উপলব্ধি করার ক্ষমতা মানুষের আছে।
আমি অনেক সময় দেখি কিছু মানুষ শুধুমাত্র বিরোধিতা করার জন্য বিরোধিতা করে। তার কাছে যৌক্তিক কোন এভিডেন্স নেই। যৌক্তিক কোন আরগুমেন্টও নেই। কোন এক কারণে মনের মধ্যে যেই ঘৃণা পুষে রেখেছে, শুধুমাত্র তার বশবর্তী হয়েই বিরোধিতা করছে। অথচ তা কিন্তু মানুষকে সত্য থেকে সম্পূর্ণ বিমুখ করে রাখতে সক্ষম।
যখন আমি কোনকিছুকে ঘৃণা করবো তখন আমার মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ ঠিক রাখতে হবে। সৎ থাকতে হবে। ঘৃণা করি বিধায় সত্যকে মিথ্যা বানানোর চেষ্টা করবো না। কিংবা ব্যাঙ্গ বিদ্রুপের মাধ্যমে নিজেকে সত্য থেকে বিমুখও করে রাখবো না। কেননা তাহলে আমাদের অনেক মাশুল গুনতে হবে।
যেমন, সুমন আমার শত্রু। বয়সে ছোট হওয়ার কারণে সে আমাকে প্রচুর মারধর করে। আমার কিছু করার ক্ষমতা না থাকলেও মনে মনে খুব রাগ হয়। ঘৃণা হয়। একদিন সুমন আমাকে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ দিলো যে, তোকে অমুক যায়গায় যেতেই হবে। না গেলে বড্ড ক্ষতি হয়ে যাবে তোর।
কিন্তু তার প্রতি আমার অনেক রাগ আর ক্ষোভ থাকার ফলে তার কথা নিরপেক্ষ ভাবে যাচাই করার প্রয়োজন বোধ করলাম না। এবং তার কথামতো সেখানে গেলামও না। এখন ভাবুন,, যদিও আমি মাজলুম যদিও সে আমার শত্রু, তবুও তার কথা সত্য হলে ক্ষতিটা কিন্তু আমার-ই হবে।
আবার অনেকে সেই সত্যটাকে না মানার উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে এমন কিছু অবান্তর আপত্তি দাড় করায় যা রীতিমতো হাস্যকর। কিন্তু তার কাছে সেটা যৌক্তিক মনে হয়। সেই ‘না মানতে চাওয়ার’ ভ্রমের কারণে। অথচ পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে সেটা মিলিয়ে দেখলেই কিন্তু তার অযৌক্তিক আপত্তির বাস্তবতা ফুটে উঠে। অথচ সে দেখবে না, ইনফেক্ট দেখতে চায় না।
কিন্তু আমরা তো দেখতে পারি। এমন-ই কিছু মানুষ আমাদের ইনবক্সে আপত্তি করে যারা আসলে-ই ভ্রমের মধ্যে রয়েছে।
১/ অনেকদিন পূর্বে একজন আপত্তি করে বলেছিল, যার হুবুহু তুলে ধরছি-
সে সেচ্ছায় নাস্তিক হতে চাইলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম –
আপনি কেন নাস্তিক হতে চাচ্ছেন?
নাস্তিকতার মাঝে এমন কী পেয়েছেন যার কারণে আপনি নাস্তিক হতে চাচ্ছেন ?
তার উত্তরে সে এক অদ্ভুত আপত্তি করে বললো – আমার স্বাধীনতা আমি কি পছন্দ করবাে , ধর্ম মানুষ কে ট্যাগে ফেলে দেয় , যার কারণে অনেক সময় অন্যায় কে মেনে নিতে হয় , যেমন কেউ তিন তালাক বললাে বউ কে, তাই বলে সম্পর্ক শেষ , এরকম আরাে অনেক কিছু।
তার নাস্তিক হওয়ার কারণটা একটু চিন্তা করে দেখুন…
ধর্ম মানুষকে ট্যাগে ফেল দেয়। অর্থাৎ ‘মুসলিম’ শব্দটা তার কাছে ট্যাগ মনে হচ্ছে। অথচ ‘মানুষ’ শব্দটা যে তাকে সমস্ত প্রাণীকুল থেকে পৃথক করে দিচ্ছে। সেটা তার কাছে ট্যাগ মনে হচ্ছে না। ‘ইসলাম ধর্মে তালাক দিলে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়’ এটা তার কাছে অন্যায় মনে হয়েছে। ধর্মের খুঁত মনে হয়েছে। অথচ সমাজে সেই একই কাজ করা হয় ডিভোর্সের মাধ্যমে। কই তার তো মনে হয় নি যে, কেউ কাউকে ডিভোর্স দিলেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়, এটা অন্যায়! তারপরও যদি মেনে নেই এটা ধর্মের খুঁত। তাহলেও বা নাস্তিক হওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়?
এই ধরনের কিছু আনলজিক্যাল আপত্তির করণেই নাকি সে নাস্তিক হতে চায়। তার কাছে কিন্তু এটাই যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে। সে কিন্তু ভাবছে, ‘আমিই ঠিক ভাবছি।’
২/ এই গতকাল-ই আরেকজন কোরআনকে নাকচ করে দিয়ে বললো-
❝ বিবর্তন / বিজ্ঞান এইগুলা তাে পরে আসবে , ফিলােসফিক্যাল এবং মােরাল উত্তর খুঁজতে গেলেই তাে কুরআন আটকে যায়। এই ধরেন , আবু লাহাব মরে গেছে সেই কবে , এখনাে যে নামাজের মধ্যে তার চৌদ্ধগুষ্ঠি উদ্ধার করেন , এসবের কোন মানে হয় ? ❞
সে যে নাস্তিক ছিল সেটা আমি তার আইডি চ্যাক করেই বুঝতে পেরেছি।
তারপর তাকে উত্তর দিয়েছিলাম…
❝আবু লাহাব সম্পর্কে সেই আয়াত নাজিল হয়েছিল যখন তার প্রেক্ষাপট ঘটেছিল।এবং তার পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ সেই আয়াতগুলো নাযিল কতেছেন। প্রশ্ন হলো এখন কি সেই ঘটনা পড়া যাবে না । মানে ইতিহাস পড়া কি অযৌক্তিক! আর আপনার আপত্তির যায়গাটা কোথায় , আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন , ১৪০০ বছর আগের ইতিহাস পাঠ করতে চাইলে সেটা বর্তমানে ঘটা জরুরী ? আশ্চর্য ! নাকি আপনি সেই ইতিহাসকে অপ্রয়ােজনীয় মনে করছেন ?
মনে রাখবেন সেটা মুহাম্মদ (স) এর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ইসলামের একটি মৌলিক ইতিহাস । তা জানাটা একজন মুসলমানের জন্য অপরিহার্য।❞
এখন তার আপত্তিটা একটু বিশ্লেষণ করুন…
কোরআনে মুহাম্মদ (স) এর সাথে ঘটে যাওয়া আবু লাহাবের ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেটা মুসলিমরা নামাজে তেলোয়াত করে কেন?
এটা তার আপত্তি। মানে সে মনে মনে একটা চিন্তাকে আবশ্যক করে নিচ্ছে যে, পড়তে হলে সেটা বর্তমানে ঘটতে হবে। অথচ হাজার বছরের ইতিহাসও তারা পাঠ্যপুস্তকে পড়ছে, মুখস্থ করছে পরিক্ষার খাতায় লিখছে। কোন আপত্তি করছে না।
তার অবস্থান কিন্তু তার কাছে আসলেই যৌক্তিক মনে হচ্ছে! এরকম কিছু যৌক্তিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই তো সে নাস্তিক হয়েছে। তাই না!
তবে এই ব্যক্তিটির আপত্তি শুনে আমার মনে হলো তাকে কিছু বলা দরকার যদিও আমি এমন ইমোশনাল হয়ে কিছু বলি না কিন্তু তাদের এই লেভেলের আপত্তি শুনে সত্যিই আর না বলে পারলাম না-
❝শুনুন এসব অর্থহীন আপত্তি ভেবে ভেবে আর কতকাল সান্ত্বনা খুঁজবেন! সত্য থেকে বিমুখ হতে চাইলে, আপনার সামনে হাজারো পথ খুলে যাবে কিন্তু তা আপনার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। অতএব সময় যেহেতু আছে ইসলামকে একটু ভালাে করে বুঝার চেষ্টা করুন । কিছু দিনের জন্য না হয় নিজেকে সমর্পন করে একটু ইসলামিক স্কলারদের বই, লেকচার গুলাে শুনুন। তারপর না হয় আবার নাস্তিক হয়ে যাবেন ।❞
আমি এই ভেবে অন্তত খুশি হয়েছি যে, লোকটি লাইক চিন্হ দিয়ে সমর্থন জানিয়েছে। জানিনা সে আদৌ করবে কিনা!
তবে করুক আর নাই বা করুক প্রত্যেকের কাছে আমার এই একই আবদার।
সত্যমনা লেখক, Robiul Islam, পেইজ- সত্যমানা ও নাস্তিকতার মূলোৎপাটন
আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুন এবং আমাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমিন।
উত্তরমুছুনআমিন। আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া ভাই।
মুছুনআমিন। আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া ভাই।
উত্তরমুছুন