কী..রে আব্দুল্লাহ! সেই কখন থেকে তোকে খুঁজছি, ফোনও করেছিলাম। ধরিসনি কেন?
আরে আর বলিস না, মামুন স্যার তো দেখছি আমাকে পাগল করে দিবেন। বিরক্তি ভাব নিয়ে আব্দুল্লাহ বললো।
মুসকি হেসে আমি বললাম, কেন? তার কাছে আবারও কোরআনের কোন ভুল ধরা পরেছে নাকি!
আব্দুল্লাহ: ক্লাসে তো পড়াবার ফাঁকে ফাঁকে আমার দিকে ঈঙ্গিত করে বলে, আব্দুল্লাহ! কোরআন তো বিজ্ঞানময়, তাহলে কোরআনে এটা হয়েছে কেন, ওটা হয়নি কেন? বিজ্ঞান তো এটা বলে ওটা নয়।
আমি: আজ কী হয়েছে সেটা বল।
আজ লাইব্রেরিতে আমাকে দেখেই স্যার বললো- ‘আব্দুল্লাহ! তুমি কি বিশ্বাস করো কোরআনে ভুল আছে?’
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।
স্যার আবারও বললেন- আমি জানি, তোমরা তোমাদের ধর্মগ্রন্থকে শ্রদ্ধা করো, কিন্তু তুমি তো বিজ্ঞানের ছাত্র তোমার তো বিশ্বাস করা উচিৎ।
আমি আর চুপ থাকতে না পেরে বললাম; স্যার আপনি কি ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন?
এক অট্টহাসি দিয়ে স্যার বললো- হাও ইজ দা পোসিবল আব্দুল্লাহ, আই এ্যাম দ্যা টিচার অফ সাইন্স।
আমি বললাম: তাহলে কীভাবে আপনি কোরআনের ভুল ধরছেন স্যার!! কোনকিছুর ঠিক-ভুল বিচার করার পূর্বে উক্ত বিষয়টির জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
কেননা আপনি যে বিষয়টির ভুল ধরছেন তার রিয়েলেটি সম্পর্কে যদি ভালো করে না জানেন, তাহলে বুঝবেন কী করে যে, এটা আসলেই ভুল!! আপনারাই তো বলেন শুধু বাহ্যিক জ্ঞান দিয়ে অনেক সময় রিয়েলেটির নিকট পৌঁছা যায় না।
স্যার বললেন, এখানে আবার বুঝার কী থাকবে! স্পষ্টই তো লেখা আছে।
তারপরও স্যার অনেক সময়ই তো আমাদের কাছে স্পষ্ট বিষয়ের বাস্তবাতাও ভিন্ন হয়।
এরই মধ্যে একটি কল এসে স্যারকে থামিয়ে দিলো, কলটি একনজর দেখেই স্যার যেতে যেতে বললেন, আব্দুল্লাহ আজ বিকেলে তুমি আমার বাসায় এসো। এ নিয়ে কথা হবে।
আব্দুল্লাহ ‘কল ধরতে না পারার’ লম্বা এই ফিরিস্তি শুনিয়ে বললো, ‘এই হলো তোর কল না ধরার কারণ হাদিন।’ কিন্তু বিকেলে যে কী করবো বুঝতে পারছি না।
আমি: কী আবার করবি, স্যারকে যা বুঝাতে চাচ্ছিলি তাই ভালো করে বুঝিয়ে দিয়ে আসবি।
একটু বিরক্তি ভাব নিয়ে সে বললো, আমি পারবো না দোস্ত, স্যারকে তুই চিনিসনা! তিনি নাছোড়বান্দা, কিছুতেই বুঝতে চাইবে না,
ওকে, চেষ্টা করে দেখ। চেষ্টা করাতে তো ক্ষতি নেই, তাই না!
আব্দুল্লাহ ফিরে যেতে যেতে বললো আচ্ছা, তাহলে তুইও আমার সাথে যাবি…
ট্রিং ট্রিং….
স্যার, আসসালামু আলাইকুম।
এসো এসো আব্দুল্লাহ, উনি কে?
আব্দুল্লাহ বললো, ও আমার ফ্রেন্ড স্যার, আপনাকে বলেছিলাম না হাদিনের কথা ও-ই সে।
স্যার আব্দুল্লাহ আর আমাকে বসতে বলে কিচেনের দিকে চলে গেলেন।
রুমটা বেশ গুছালো, দরজা-জানালা গুলো অসাধারণ এঙ্গেলে বসানো হয়েছে। আমার পাশেই একটা বিশাল বড় জানালা! জানালা দিয়েই বাহিরের মন মাতানো পুরো বাগানটা এক নজরে দেখা যাচ্ছে। বাহ কী চমৎকার দৃশ্য!
এরই মধ্যে স্যার আমাদের টেবিলে বিস্কিট আর হাতে কফি দিতে দিতে বললো তো হাদিন! কেমন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো স্যার, আপনি? বললাম আমি। উত্তরে তিনি দাঁতগুলো বের করে বললেন, সেইম টু ইউ। এদিকে আব্দুল্লাহ মনোযোগ সহকারে ফুঁ দিয়ে দিয়ে কফির গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে। মনে হয় আধঘণ্টার আগে থামবে না। তার এই ফুঁ দিয়ে দিয়ে কফি খাবার দৃশ্যটা আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লাগে।
আবারও স্যারকে উদ্দেশ্য করে আমি বললাম- আপনার গাছ-গাছালি বেশ পছন্দ তাই না স্যার? কফির গ্লাসে চুমুক দিয়ে স্যার বললেন, কী করে বুঝলে?
স্যার! আপনার বাড়িতে একজন অন্ধলোক আসলেও বুঝে ফেলবে যে আপনি প্রকৃতি কতটা পছন্দ করেন!
স্যার: তাই.. হেসে হেসে..!
সেই ছোট বেলা থেকেই।
তখন তো আমি সময়ে অসময়ে গাছে উঠে বসে থাকতাম, কেউ কারণ জিজ্ঞেস করলেই বলতাম ‘হাওয়া খেতে উঠেছি।’ গাছে বসে হাওয়া খাওয়ার মজাই আলাদা!
উহ! আই মিসিং মাই ইনফেনছি…..
স্যারের সৃতিচারণে কিছুটা ভাঙন ধরিয়ে বললাম, কিন্তু স্যার আজ কী যে হলো! সারাদিন একটুও বাতাস নেই, গাছের পাতাটা পর্যন্ত নড়ছে না। আচ্ছা স্যার একটা প্রশ্ন করবো?
স্যার হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
শুনেছি বিজ্ঞান বলে পৃথিবী নাকি ২৪ ঘন্টাই ঘুরছে, তাও আবার অনেক দ্রুত গতিতে! অথচ আমরা দেখছি পৃথিবী স্থির, গাছের একটি পাতাও নড়ছে না, পৃথিবী যদি ২৪ ঘন্টাই ঘুরতো তাহলে তো এটা সম্ভব হতো না। তাই না! অতএব এটা কি বিজ্ঞানের ভুল নয়?
হঠাৎ আব্দুল্লাহর নাকে মুখে হাঁচি উঠে গেল, ‘ও’ আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। স্যার ওকে পানি এগিয়ে দিয়ে একটা অট্টহাসির সাথে আমাকে বললেন কী বলছো তুমি!! তোমার কি বিজ্ঞান সম্পর্কে কোন ধারণা নেই??
এটা বুঝতে বিজ্ঞান জানা লাগবে স্যার! এটা তো স্পষ্ট, নিজের চোখে দেখা, চোখকে কীভাবে অস্বীকার করি স্যার?
স্যার এবার সিরিয়াস হয়ে বললেন, হ্যা হাদিন অনেক কিছু বুঝতে নলেজ লাগে, সবসময় নিজের চোখ, আশপাশের পরিবেশ ও বাহ্যিক জ্ঞান আমাদেরকে সত্য বলে না।
সত্য পর্যন্ত পৌঁছতে হলে উক্ত বিষয়ের জ্ঞান আবশ্যক, বিজ্ঞানের ছাত্র না হয়ে তুমি বিজ্ঞানের ভুল ধরতে পার না,, এটা তোমার বোকামিই প্রকাশ করবে।
আমি: তাহলে ধর্মতত্ত্বের ক্ষেত্রে কেন ভিন্ন হবে স্যার!! কেন একজন মানুষ ধর্মতত্ত্বের ছাত্র না হয়েও কোরআনের ভুল ধরার অধিকার পায়!? এটা কি তার বোকামি নয়!!?
কেন একজন মানুষ শুধুমাত্র বাহ্যিকটা দেখেই কোরআনের সারমর্ম বুঝে ফেলতে চায়? কোন্ বুঝে মানুষ ধর্মীয় ব্যখ্যার ক্ষেত্রে ইসলামিক স্কলারদের কথার চেয়ে ‘আলিফ, বা, তা না জানা’ কিছু পাতি নাস্তিকদের কথাকে প্রাধান্য দেয়! এটা কি তার বোকামি প্রকাশ করে না?
স্যার আর কিছু বললেন না, অপলক নয়নে আব্দুল্লাহর দিকে তাকিয়ে আছেন আর আব্দুল্লাহ তাকিয়ে আছে বড় জানালা দিয়ে বাগানটার দিকে। গাছের পাতাগুলি এখনোও নড়ছে না। মনে হয় দুজনেই কিছু একটা চিন্তা করছে।
এদিকে আমার কফি নিজ অস্তিত্ব হারিয়ে শরবতে পরিণত হয়েছে।
আচ্ছা কফি কি কখনো শরবত হয়?
বেশ কিছুক্ষণ পর আব্দুল্লাহ বললো ঠিক আছে স্যার, আমরা তাহলে আসি।
সত্যমনা লেখক – Robiul Islam, পেইজ- সত্যমনা ও নাস্তিকতার মূলোৎপাটন।
COMMENTS