উত্তরঃ আপনার প্রথম প্রশ্ন স্রষ্টার বাণীতে কি ভুল থাকা সম্ভব? উত্তর হলো, না। কখনোই সম্ভব না। আল্লাহ বলেছেন, এটি এমন কিতাব, যার মধ্যে কোন সন্দেহ পর্যন্ত নেই।
তাহলে আল্লাহ কোরআনের বিভিন্ন আয়াতকে রহিত করেছেন কেন?
–প্রশ্নটি খুবই হাস্যকর। যারা নাসখ বিষয়টির ব্যাপারে সামান্যতমও জানেন, তাদের জন্য।
অনেকেই হয়তো মনে করেন যে, রহিতকরণ মানে ভুল সংশোধন। ব্যাপারটি মটেও এরকম নয়, ইসলামিক পরিভাষায় নাসখ বা রহিত করা মানে হচ্ছে-
"নাসখ মানে সকল শর্ত পূরণ করেছে এমন কোনো কর্মবিষয়ক বিধান পালনের সময়সীমার সমাপ্তি ঘোষণা করা"। [১]
– নাসখ বলতে স্রষ্টার একটি বিধান নতুন আরেকটি বিধান দ্বারা বাতিল হয়ে যাওয়াকে বোঝায়। [২]
আমরা পরিবর্তন করা মানেই ভুল সংশোধন মনে করি। যার ফলেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। অথচ বিষয়টি মটেও এমন নয়।
যেমন– আল্লাহ একবার বাইতুল মাকদিসের দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ পড়ার আদেশ করেছেন। কিছুদিন পর সেই আদেশ রহিত করে দিয়ে কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ পড়ার আদেশ দেন। এই যে রহিত করা হলো মানে হুকুম পরিবর্তন করা হলো এটা কি ভুল সংশোধন করার জন্য!?
ভুল সংশোধন হতো যদি আল্লাহ কোন তথ্য, ইতিহাস, কিংবা ভবিষ্যত বানীকে রহিত করতেন।
কিন্তু কোরআনের কোন তথ্য, ইতিহাস কিংবা ভবিষ্যত বানীকে রহিতকরা হয়নি। বরং বিভিন্ন বিধান রহিত করে নতুন বিধান দেয়া হয়েছে। কারণ রহিতকরণ মানে ভুল সংশোধন না।
এখন প্রশ্ন হলো, স্রষ্টা যদি আগে থেকেই সব জেনে থাকেন, তার জ্ঞান যদি পরিপূর্ণই হয়ে থাকে, তাহলে কোন বিধানকে পরবর্তীতে কেন পরিবর্তন করতে হবে?
এখানে আরেকটি উদাহরণ দিয়ে এই ধরনের অজ্ঞতাপ্রসূত প্রশ্নের সরূপ তুলে ধরা যায়। যেমন - একজন নেশাগ্রস্ত লোকের যিনি চিকিৎসা করেন। তিনি কিন্তু জানেন মানুষের জন্য নেশা জাতীয় দ্রব্য মরন ব্যধি। তারপরও কিন্তু তিনি নেশাগ্রস্ত লোকটিকে প্রথম বারেই সমস্ত নেশা জাতীয় দ্রব্য ছেড়ে দেয়ার কথা বলেন না। একটু একটু করে ধাপে ধাপে রোগীর অবস্থা বুঝে ট্রিটমেন্ট করেন।
এখন যদি প্রশ্ন করা হয়, চিকিৎসক তো জানেনই যে, নেশা জাতীয় দ্রব্য তার জন্য ক্ষতিকর। তাহলে প্রথম দিনেই কেন তাকে এগুলো থেকে বিরত থাকতে বললেন না। উত্তরটা আমাদের সবারই জানা। এতে চিকিৎসকের নিপুণ যোগ্যতাই প্রকাশ পায়। অজ্ঞতা নয়।
এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা কোরআনে তিন ধাপে মদপান হারাম করেছেন। প্রথম দুই ধাপের শিথিলতাকে রহিত করা হয়েছে তৃতীয় ধাপের আয়াতের মাধ্যমে।
একজন নেশাগ্রস্ত ব্যাক্তি তো শুধু নেশায় আসক্ত কিন্তু ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে মানুষ ছিল জাহিলিয়াতের যুগে। চরম নিকৃষ্ট। নিজের সন্তানকে মেরে ফেলতেও কুন্ঠা বোধ করতো না। মানুষ নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। এই ধরনের মানুষকে তাদের অবস্থা বুঝে ট্রিটমেন্ট করতে আল্লাহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আয়াত নাজিল করেছেন। চুরান্ত আয়াত নাজিল করার পর পূর্ববর্তী আয়াত রহিত করে দিয়েছেন। এসম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন -
“আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জানো না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?”
[সূরা আল বাকারাহ (২): ১০৬]
আল্লাহর এই সুকৌশল বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে জাহিলিয়াতের সেই নিকৃষ্ট মানুষগুলো সর্বশ্রেষ্ট মানুষে রুপান্তরিত হয়েছে। ইতিহাস যার সাক্ষী হয়ে আছে আজও।
এছাড়াও ড. বিলাল ফিলিপ্স তাঁর বইতে নাসখের তিনটি মৌলিক কারণ উল্লেখ করেছেন: [৩]
■ আসমানী আইনসমূকে ধীরে ধীরে পূর্ণতার স্তরে নিয়ে যাওয়া।
■ ঈমানদারদের পরীক্ষা করা। কখনো তাদের একটি আইন মানতে বলা হয় আর কিছু কিছু জায়গায় তাদের সে আইন মানতে বারণ করা হয়। এভাবে পরীক্ষা করা হয়, ঈমানদাররা সবসময় আল্লাহর আইন মানতে কতটুকু প্রস্তুত।
■ কখনো কঠিন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ঈমানদারদের পুরস্কার অর্জনের সুযোগ করে দেওয়া হয়। কারণ- কাঠিন্য যত বেশি, পুরস্কারও বেশি। আবার সহজ আইন প্রণয়ন করে ঈমানদারদের একটু বিশ্রাম প্রদান করে এ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, আল্লাহ মূলতঃ তাদের কল্যাণই কামনা করেন। যেমন, প্রথম দিকে রাতের নামাজ আদায় করার পর পরের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও সহবাস নিষিদ্ধ ছিলো। এই আইনটি কিছুটা কঠিন। পরবর্তীতে এই আইন রহিত করে রাতের বেলা পানাহার ও স্ত্রীর নিকট গমন করাকে বৈধ করা হয়। [৩]
সত্যমনা লেখক-
Robiul Islam.
তথ্যসূত্রঃ
[১] আল ফাউজুল কাবির।- শাহ ওলিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবি (রহ)।
[২] ঐ
[৩]https://www.rokomari.com/book/116694/quran-bujar-mulneeti
খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনশুকরিয়া।
উত্তরমুছুন