নাস্তিক থেকে আস্তিক হওয়ার গল্প (২)
আমি ভাবতাম মুসলিমদের মনে কখনোই সংশয় আসতে পারে না। এই ভাবনা থেকে নিজেকে আমার অস্বাভাবিক মনে হতে লাগলো। আমি পড়ে গেলাম মানসিক চাপে, রাতভর কাঁদতাম, খুব হতাশ লাগতো। মনে হতো – আল্লাহ আমাকে পরিত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমি নামায পড়ে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য দুয়া করতাম না! উলটো ইসলামের ভুল খুঁজে বের করার জন্য উঠেপড়ে লাগতাম। আসলে কি, কেউ আগে থেকেই ভুল খোঁজার মানসিকতা নিয়ে খোজ করলে সঠিক জিনিসও তার চোখে ভুল হয়ে ধরা দেয়। আমার তখন মনে হলো, নবীর জীবন পড়ে দেখি, সেখানে কী কী ভুল পাই তা লিস্ট করি। একাজে বিভিন্ন জাল হাদিসের শরণাপন্নও হয়েছিলাম। একই সাথে আমার মাথায় নারীবাদও ভর করে বসলো। ইসলামকে নারী-বিরোধী মনে হচ্ছিল আমার।
টুইটারে অনেকেই আমাকে ইসলাম বিরোধী তরুণী হিসেবে চেনে। টুইটারে থাকা মুসলিমদের সাথে আমি ঝগড়া বাঁধাতাম। নিজের মনমতো ইসলামকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে জট পাকাতাম। নিজেকে যাতে পরাজিত হতে না হয় এই পথ খুঁজতাম। ইসলাম বিরোধী যত পোস্ট আমি দিয়েছি সেগুলো কোনোটাই খোলামনে পড়াশোনা করে দিতাম না। জাস্ট কিছু ছুড়ে রাখতাম, অপেক্ষা করতাম বোকা মুসলিম কখন সেই জালে ফাঁসে। আমার কাছে এসবই কেবল খেল-তামাশা ছিলো। তখন সব এক্স-মুসলিম মিলে একত্রে স্রেফ ট্রল করাকেই আমরা কাজের কাজ মনে করতাম। এখন তাই কোনো এক্স-মুসলিমকে একদমই পাত্তা দিই না। একদম না।
মুসলিম থাকাকালে আমার মনে হত – আমার জীবনের একটা উদ্দেশ্য আছে। একটা লক্ষ্যের দিকে আমাকে এগুতে হবে। যখনই সে পথে হোঁচট খেতাম আল্লাহর দিকে ফিরতাম। ইসলাম ছেড়ে দেয়ার পর জীবনের উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলি আমি। প্রবল হতাশায় কেটেছে সে সময়গুলো। এরপর করোনা মহামারি এলো। আমার হতাশা আরো বেড়ে গেল। বাইরে গিয়ে মৌজমাস্তি করার সুযোগ হারালাম। এসব করে নিজেকে দুনিয়ার নেশায় মাতাল করে রাখতাম। আসলে কোয়ারেন্টাইনের একাকীত্ব আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে – আমি কতটা অসুখী।
একরাতে আমি মুভি দেখছিলাম। সেখানে এক চরিত্র আরেকজনকে প্রশ্ন করে-তোমার জীবনকে ভালোর দিকে নিতে তুমি কিছু করেছো? প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। আমি জানি উত্তরটা হলো – না, আমি এমন কিছুই করি নি। শেষবার কখন প্রাণসুখ উপযোগ করেছিলাম তা স্মৃতির খাতা হাতড়ে খুঁজতে থাকি। মনে পড়ে এক রমাদান মাসের কথা, যখন পরিবারসহ আমরা তারাবি পড়তে যেতাম। কেন জানি আমার মুসলিম জীবনটা আমি মিস করতে থাকি। কতটা বছর কেটে গেলো, আমি হৃদয়ের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ইসলামকে আসতে দিই নি, আর আজ আমি সেদিনগুলো মিস করছি। কি অদ্ভূত তাই না! আল্লাহই জানেন, শয়তান কোন দুঃখে আমাকে টেনে নিয়েছিলো।
লকডাউনে আটকে থেকে ভাবতে লাগলাম – ইসলাম নিয়ে ভালো জানাশোনা আছে এমন একজন মুসলিমের সাথে খোলামনে আলাপ করি। এতদিন তো শুধু মুসলিম-বিদ্বেষী সাইট থেকেই ইসলাম খুঁজেছি! আমি টুইটারের বাইরে এমন কাউকে খুঁজতে থাকলাম। টুইটার পুরোই বিদ্বেষভরা জায়গায় পরিণত হয়েছে। ডিস্কর্ডে মুসলিমদের এক সার্ভারে আমি জানার চেষ্টা করতে শুরু করি। মনের ভেতর যত খটকা, প্রশ্ন ছিলো সবগুলোরই উত্তর পেয়ে যাই। তারা ধৈর্যের সাথে, নরমভাবে আমাকে বোঝাতো। ধীরে ধীরে উত্তরগুলোর পিছে থাকা প্রজ্ঞা আমার মানসপটে ভেসে উঠতে শুরু করে। তবে মন এত সহজে মানতে চাইতো না, খালি ভুল খোঁজার চেষ্টা করতাম। আচ্ছা সত্যের মাঝে কী ভুল খোঁজা যায়!? কখনোই না।
জীবন কাটতে থাকে। কাউকে না জানিয়ে এই রমাদানের ১ম রজনীতে আমি ইসলামে ফিরে আসি। কালিমা পড়ে, রোজা – নামায শুরু করি। রবের কাছে দুয়া করতে থাকি – উনি যাতে আমাকে সঠিক পথ দেখান। এ বছরের এপ্রিলে আমি একটা বড় সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম, মাসের পর মাস তা আমাকে কুরেকুরে খেতে থাকে। বড্ড পেরেশানিতে আক্রান্ত হই। আমি আল্লাহর কাছে দুয়া করেছিলাম – এই পেরেশানি যেন কেটে যায়। পরের দিনই দুয়ার উত্তর চলে আসে। সেদিন আমার মনে হচ্ছিল আমার ঈমান আকাশের মেঘগুলো স্পর্শ করেছে আনন্দের সাথে, সে মেঘ থেকে ঝরে পড়া বারিষে মনের অলিগলি কৃতজ্ঞতায় ভিজে যাচ্ছে। আমি নিমজ্জিত হয়েছি অবগাহনে।
আসলে এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আমার শুধু মনে হচ্ছিল – আমি যেন নীড়ে ফিরে এসেছি। আমি না বুঝতেই পারি নি নামাযকে আমি এতটা মিস করছিলাম! আমার অশান্ত চিত্ত শেষতক স্বস্তি খুঁজে পেল সাজদায়। ইসলাম ছেড়ে দেয়ার পর এতটা বছর আমার শুধু মনে হতো – আমি কি যেন হারিয়ে ফেলেছি! কি যেন নেই! আমি জানতাম আমার সুখপাখি উড়াল দিয়েছে অস্তাচলে। পরে বুঝেছি – সেই হারানো আলোকপাখি ছিল ইসলাম। ধাঁধাঁর হারানো সূত্রটা আমি ফিরে পেয়েছি, তাই –
আজি কৃতজ্ঞচিত্তে অবনত হই রবের তরে।
ভাবানুবাদ - রাফান আহমেদ।
সত্যমনা এর পক্ষ থেকে নাস্তিকদের প্রতি একটি আবদার, যদি সত্যিকার অর্থেই আপনি সংশয়ে থাকেন? তাহলে ট্রোল করে নয়, সত্যানুরাগী মন নিয়ে সত্যকে খুঁজুন। ইনশা আল্লাহ সত্য আপনি পেয়ে যাবেন। ইসলাম সম্পর্কে যে কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
Alhumdulillah
উত্তরমুছুন