আল্লাহ কি আমাদের সম্মতি না নিয়েই আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন ঈমান আর সৎ কাজের মাধ্যমে জান্নাতি অথবা কুফরি ও অসৎ কাজের মাধ্যমে জাহান্নামী হওয়ার জন্য?
এই প্রশ্নটি সোজাসাপ্টা ভাবে করলে এমন হবে-
• আল্লাহ আমাদের সম্মতি না নিয়েই কেন সৃষ্টি করলেন?
প্রথম প্রশ্নটি ঐ অবুঝ শিশুর প্রশ্নের অনুরূপ হয়ে গেল। যে তার মা-বাবাকে অভিমানী কণ্ঠে বলছে; আব্বু আম্মু! তোমাদের বিয়ের সময় আমাকে দাওয়াত দেওনি কেন?
সে তো অবুঝ। বুঝবে কী করে যে, মা বাবার বিয়ের সময় তার অস্তিত্বই ছিল না। কীভাবে তাকে দাওয়াত দিবে! কিন্তু তারাও কি এই শিশুর মতো অবুঝ যে আপত্তি করছে- আল্লাহ আমাদের সম্মতি না নিয়েই কেন সৃষ্টি করলেন?
সৃষ্টির পূর্বে তো আমাদের অস্তিত্ব-ই ছিল না। আমরা ছিলাম নাথিং। কোন কিছুই না। আল্লাহ আমাদেরকে নাথিং থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাহলে কীভাবে! কার কাছ থেকে সম্মতি নেওয়া হবে!
দ্বিতীয় প্রশ্নটির জবাব;
'আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন।' অতঃপর পরিক্ষার উদ্দেশ্যে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। তার মানে তিনিই আমাদের স্রষ্টা। এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই দ্বিতীয় প্রশ্নটির উদ্ভব।
অতএব স্রষ্টার ক্ষমতা। হস্তক্ষেপের অধিকার ইত্যাদি বিষয় আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।
যেমন একজন শাসকের ক্ষমতা হলো- দেশ পরিচালনা করা। দেশের মানুষ তার নির্ধারিত আদেশ নিষেধ মেনে নিতে বাধ্য থাকে। যদিও দেশ কিংবা দেশের মানুষ তার মালিকানাধিন সম্পত্তি না।
একজন মা বাবা কিংবা শিক্ষকের এই অধিকার আছে যে তিনি আমাদের শাসন করবেন। এ অধিকারের ব্যাপারে কারো কোনো আপত্তি নেই। যদিও তাদের আমাদের সৃষ্টিতে কোন ভূমিকা নেই।
তাহলে কি স্রষ্টার মানুষকে পরিক্ষা করার অধিকার থাকাটা খুব অস্বাভাবিক! অথচ স্রষ্টা হওয়ার দাবী; আমরা সম্পূর্ণ তার মালিকানাধীন সম্পত্তি। স্রষ্টা হয়েও যিনি সামান্য পরিক্ষা করার অধিকার পাবেন না। এমন স্রষ্টাকে আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলে মানিনি।
এবার আসি প্রশ্নটির মূল উদ্দ্যশ্যে...
আল্লাহ আমাদের সম্মতি না নিয়েই কেন পরিক্ষায় ফেলেছেন?
এই প্রশ্নটি কেবল নাস্তিকরাই করে থাকে। (অথচ নাস্তিকদের এই প্রশ্নে থাকারই অধিকার নেই। কেননা স্রষ্টাকে মেনেই এই প্রশ্নের উদ্ভব।) আর এই প্রশ্নটি করার দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য এটা নয় যে তারা পরিক্ষার ফলাফল নিয়ে ভয় পাচ্ছে কিংবা তাদেরকে কোন কঠিন পরিক্ষায় ফেলা হয়েছে। কেননা তাদের এক্টিভিটি তা প্রমাণ করে না। বরং তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো এই আপত্তির মাধ্যমে স্রষ্টা নেই তা প্রমাণ করা। আর তা খুবই হাস্যকর।
বিষয়টা এমন হলো- যেহেতু স্রষ্টা আমাদের সম্মতি না নিয়েই পরিক্ষায় ফেলেছেন। সেহেতু স্রষ্টা বলতে কেউ নেই। হা হা হা... খুবই হাস্যকর।
আর যদি কোন আস্তিক এই প্রশ্নটি করে তাহলে সে তো বিশ্বাস-ই করে যে আল্লাহ তায়ালা সর্বশক্তিমান৷ যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। কারো প্রতি মুখাপেক্ষী নন। বান্দার সম্মতির প্রতিও নন।
এরপরও যদি তার মনে হয় যে, বান্দার অনুমতি ছাড়া কি তাকে পরিক্ষায় ফেলা উচিৎ?
তাহলে আমি বলবো ধরুন আল্লাহ আপনাকে পরিক্ষায় ফেললেন না। আল্লাহ আপনাকে স্রেফ সৃষ্টি করলেন। এখন আপনার কী করা উচিৎ? যেই আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেছেন;
• তাকে অস্বীকার করা উচিত!
• তার বিরুদ্ধাচারণ করা উচিত!
• সম্পূর্ণ তার মর্জির বিপরীতে চলা
উচিত!
শুধুমাত্র এই কারণে যে, তিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন অাপনার সম্মতি না নিয়েই!
আপনি যদি আস্তিক ও কৃতজ্ঞ হন তাহলে বলবেন: না, কখনোই না। যিনি আমাদের মালিক তার বিরুদ্ধাচারণ করা উচিত হবে না। তাকে অস্বীকার করাও সম্পূর্ণ অনুচিত। অকৃতজ্ঞতা। স্রষ্টার দেয়া পৃথিবীতে থেকেও তার বিরুদ্ধাচরণ করা নিঃসন্দেহে নিমোক হারামি।
একদম ঠিক। আর এই নিমোক হারামির কাজটা না করলেই আপনি পরিক্ষায় পাস। আপনার জন্য পুরস্কার অবধারিত। এটা আলাদা কোন পরিক্ষা নয়।
• পরিক্ষা না হলেও সৃষ্টির তার স্রষ্টার সাথে নিমোক হারামি করার অধিকার নেই।
• পরিক্ষা না হলেও সৃষ্টির তার স্রষ্টাকে
অস্বীকার করা উচিত নয়!
• পরিক্ষা না হলেও সৃষ্টির স্রষ্টার কথা
মেনে চলা উচিত।
তারপরও আল্লাহ এটাকে পরিক্ষা ঘোষণা করে পুরস্কার নির্ধারণ করেছেন বান্দার উপর অনুগ্রহ করে। কেননা এই পুরস্কার বান্দা প্রাপ্য নয়।
আর যদি আপনি নিমোক হারামির কাজ করেন। তাহলে তো পরিক্ষার দরকার নেই। এমনিতেই আপনাকে শাস্তি পেতে হবে৷ চুরি করে যে সাঁজা প্রাপ্ত হয়েছে, তার কি সাঁজা পেতে পরিক্ষা দেয়া লেগেছে? সুতরাং আল্লাহ আমাদের পরিক্ষায় ফেলুক বা না ফেলুক। শাস্তির কাজ করলে তাকে সাঁজা পেতেই হতো।
এখন যেই শ্রেণিটা জেনে-বুঝে শাস্তির কাজ করতে চায় তারা ভাববে- এই গোটা সিস্টেমটাই (জীবন) যদি না হতো। তাহলে আর শাস্তির মুখোমুখি হতে হত না।
অথচ অপর শ্রেণি যারা স্রষ্টার কথা মেনে চলে তাদের জন্য এটি অত্যন্ত আনন্দময় ও সুখের একটি সিস্টেম। উপরন্তু তার মাধ্যমে সে চুড়ান্ত সুখের জায়গা জান্নাতে যেতে পারবে। এই সিস্টেম না হলে তারা উভয়টাই মিস করতো।
দুই শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গি দুরকম-
• যে শ্রেণি সাঁজা প্রাপ্ত, তাদের কাছে জীবনটা বেদনার।
• আর যে শ্রেণি পুরস্কার প্রাপ্ত, তাদের কাছে জীবনটা নেয়ামতের।
যেমন- দুনিয়াতে কোন আসামি যখন সাঁজা প্রাপ্ত হয়। তখন তার কাছে (সাঁজা প্রাপ্ত হওয়ার) এই সিস্টেমটা বড্ড নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অযৌক্তিক একটি সিস্টেম মনে হয়। সে ভাবে- যদি অপরাধীদের কোন শাস্তির সিস্টেম না থাকতো, তাহলে আর শাস্তি পেতে হত না। অথচ সাধারণ মানুষ, যারা অপরাধী নয়, তাদের কাছে অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার বিধান খুবই যৌক্তিক, মানবিক ও ইনসাফপূর্ণ একটি সিস্টেম।
আর কোন আইন বা সিস্টেম অপরাধীদের প্রতি লক্ষ্য করে করা হয় না বরং ভালো মানুষের প্রতি লক্ষ্য করে করা হয়। যেমন আল্লাহ তায়ালা করেছেন। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি থেকে শুরু করে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন মুমিনগনের উদ্দেশ্যে। এজন্যই আমরা হাদীস থেকে জানতে পারি যে পৃথিবীতে যখন একজনও আল্লাহকে ডাকার মানুষ থাকবে না। তখন আল্লাহ এই পুরো সিস্টেমটা ভেঙে দিবেন।
পরিশেষে পুরো বিষয়টাকে এক বাক্যে বলছি: আপনি যদি কোন অপরাধ করেন তাহলে আপনার কাছে মনে হবে; Something is wrong.
বাট কোন অপরাধ না করলে মনে হবে;
There is no problem.
খুবই যুক্তিযুক্ত পোস্ট
উত্তরমুছুনজাজাকাল্লাহ খাইরান । আশা করি সত্যমানার পাশে থাকবেন ।
মুছুনপড়ে খুব ভালো লাগলো। অসাধারণ আরটিক্যাল।
উত্তরমুছুনজাজাকাল্লাহ খাইরান । আশা করি সত্যমানার পাশে থাকবেন ।
মুছুনঅসাধারন লিখেছেন।
উত্তরমুছুনঅবশ্যই রবিউল ভাই আমি সবসময় সত্যমনার পাশে আছি।
উত্তরমুছুনইনশাআল্লাহ ভাইয়া।
উত্তরমুছুন