উদ্ভাবিত মুক্তচিন্তা পূর্ণতা পাক সত্যের ছোঁয়ায় - সত্যমনা আমাদের সকল আপডেট পেতে এখনি সাবস্ক্রাইব করুন

নারীবাদীর কুমন্ত্রণায় ভাঙলো না মিলির সংসার।

বিয়ের অল্পকিছুদিনের মধ্যে-ই মিলির ভেতরে অনেক পরিবর্তন চলে এলো। এক মাসের ব্যবধানে তার মনে হলো বিয়েটা নিয়ে যতটা ভয় আর আতঙ্কে সে ছিলো বিষয়টা মোটেও তেমন নয়। অথচ মিলির স্পষ্ট মনে আছে প্রথম রাতটা কতটাই না ভয়ে ভয়ে কেটেছিলো তার।

মিলির নারীবাদী বান্ধুবী ফেরদৌসি মুখ বাকিয়ে বলেছিলো, বিয়েটা হলো এক প্রকার কারাবাস বুঝলি! যে একবার এই কারাগারে ঢুকে মরনের আগে সে আর বের হতে পারে না। বাসর রাতে দেখবি ঐ মুখভর্তি দাড়িওয়ালা লোকটা তোকে ঝাপটে ধরে বলবে, তুমি আমার সন্তান দেওয়ার মেশিন। আমাকে সন্তান দেওয়া ছাড়া তোমাকে আর অন্য বেশিকিছু ভাবতে হবে না। 


মিলির স্বামী মো হেলাল উদ্দিন এসবের কিছুই করেনি। হিংস্র পশুর মত তার উপর ঝাপিয়েও পড়েনি। বরং স্ত্রীর ভীত মুখখানির দিকে চেয়ে এমন মিষ্টি করে হেসেছে যা দেখে মিলি ভয় ভয় গলায় জিজ্ঞেস করে বললো, আপনি এভাবে হাসছেন কেন?


হাসি থামিয়ে হেলাল উদ্দিন বললো, হাসছি তোমাকে দেখে।


মিলি নিজের এপাশ ওপাশ একবার দেখে পুনরায় চুপ হয়ে গেলো। স্বামি নামক এই আগুন্তকের সাথে বেশি কথা বলা যাবে না। নিজেকে রক্ষার জন্য তার বান্ধুবী ফেরদৌসি যেসব পরামর্শগুলো দিয়েছে সেইসবের একটি হলো- অনেক বুদ্বিমান ছেলে এমন আছে যারা বাসর রাতে স্ত্রীকে গল্পের ছলে, নানান কল্প কথায় ভুলিয়ে ভালিয়ে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। এদের বিষয়ে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে৷ তাদের সাথে হেসে হেসে গল্প করা যাবে না। 


মিলি আপত্তি করে বলেছিলো, স্বামি কি আবার স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে পারে নাকি?


- কেন পারে না? সঙ্গমে স্ত্রীর মত না থাকলেই তো সেটা রেপ হবে।


প্রথম রাতে মিলির সাথে এমন অঘটনের কিছুই ঘটলো না। যখন তার ঘুম ভাঙলো সে দেখলো তার স্বামী মো হেলাল উদ্দিন খোলা বারান্দায় জায়নামাজের উপর জোড়া হাতে মোনাজাতে বসে আছে।  মিলি নিজের চোখ বন্ধ করে আরেকবার ঘুমানোর চেষ্ঠা করলো৷ 


খানিকবাদে তার জন্য চা চলে আসলো। চা নিয়ে এসেছে তার স্বামী হেলাল উদ্দিন। মিলি অনেকটা হতভম্বের মত চায়ের কাপটা হাতে নিলো। 


হেলাল উদ্দিন মিষ্টি গলায় বললো, এভাবে বোকার মত চেয়ে থাকলে গরম চায়ে যে তোমার হাত পুড়বে!


মিলি সুরুৎ শব্দে চায়ের কাপে ছোট্ট চুমুক দিলো। চায়ের স্বাদটা বেশ দারুন হয়েছে। এমন স্বাদের চা পর পর কয়েক কাপ খাওয়া যায়৷ কিন্তু মুশকিল হলো এমন সুস্বাদু চায়ের কারিগর হেলাল উদ্দিন সাহেব একটু পরে অফিস চলে যাবেন। মিলির একবার ইচ্ছে হলো আদুরে গলায় স্বামীকে বলুক, আজ আপনাকে অফিসে যেতে হবে না। আমার জন্য মিষ্টি করে আরেক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসুন।  আপনার তৈরী চা আর আপনার সাথে গল্প-আড্ডায় এই সুন্দর সকালটি কাটিয়ে দিলে আমার মোটেও খারাপ লাগবে না। 


মিলির বিয়ে হয়েছে আজ একমাস হলো। এই এক মাসে স্বামীর সংসারটা সে পুরোপুরি নিজের করে নিয়েছে৷ এখন মুখভর্তি দাড়িওয়ালা লোকটাকে তার একটুও বিরক্ত লাগে না। বরং সারাটা দিন মিলির অপেক্ষায় কাটে, কখন মানুষটা বাড়ি ফিরবে..


মিলির প্রতিদিনের এমন অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় ছোট ছোট সুন্দর উপহার দিয়ে। স্বামী কর্তৃক এই পাওয়াগুলো কখনো কখনো মিলির বড় বিচিত্র মনে হয়। গত সোমবারে তার জন্য নিয়ে আসা হলো লাল রঙের একটা রিমোট কন্ট্রোল খেলনা গাড়ি। মিলি জিজ্ঞেস করলো - এই খেলনা গাড়ি কার জন্যে?


হেলাল উদ্দিন জবাব দিয়ে বললো- কার জন্য আবার হবে? এটা তোমার জন্য এনেছি। এটা দিয়ে তুমি খেলবে। 


মিলি হো হো করে হেসে দিলো। বললো- আমার কি এখনো খেলার বয়স আছে নাকি?


- সে আমি জানি না। শখ করে এনেছি। তুমি এটা দিয়ে খেলবে। তোমাকে খেলতে দেখলে আমার বড় ভালো লাগবে। 


মিলিকে সত্যি সত্যি খেলনা গাড়িটা দিয়ে একদিন খেলতে হলো।


একদিন শুক্রবারে সময় করে হেলাল উদ্দিন স্ত্রীকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে চলে গেলো। সেখানে মিলির বান্ধুবী ফেরদৌসির সাথে দেখা হলো।


দুই চোখের ভ্রু কোচকে ডঙিলা গলায় ফেরদৌসি জিজ্ঞেস করলো- ইনি-ই বুঝি তোর জেলার সাহেব?


- তুই আমার স্বামীকে জেলার সাহেব বললি কেন?


- স্বামী আর জেলখানার জেলার এই দুটি প্রায় একই বলা চলে বুঝলি!


- না, এই দুইটা কখনোই এক না। তুই আমার স্বামীকে জেলার ডাকবি না।


বাহ তুইতো দেখছি রাগও করতে পারিস মিলি! বাই দ্যা ওয়ে মি.  জেলার সাহেব, আপনার নামটাইতো জানা হলো না। 


এই বলে ফেরদৌসি নিজের হাতখানি করমর্দনের আশায় হেলাল উদ্দিনের দিকে বাড়িয়ে ধরলো। 


- আমার নাম মো হেলাল উদ্দিন। আর আমাকে আপনি ক্ষমা করবেন কেননা, বেগানা নারীদের স্পর্শ করা হাদিসে নিষেধ আছে।


হাত নামিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গিমায় ফেরদৌসী বললো-  আচ্ছা বেগানা নারীদের হাত ধরলে আপনার ধর্ম ছুটে যায়, আর বউকে নিয়ে ডেটে আসলে বুঝি ধর্ম রক্ষা হয়?


- আপনি ঠিকই ধরেছেন। স্ত্রীকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে গেলে ধর্ম ছুটে যায় না। বরং এতে ধর্ম রক্ষা হয়। আর এটা আমাদেত নবীজির সুন্নত।


মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জীবনের প্রতিটি কাজে নবীজির সুন্নত রক্ষার চেষ্টা করেন। এই যে কথা বলার সময় তার মুখে একটা চাপা হাসি লেগে থাকে সেটাও এই সুন্নতের-ই একটা অংশ।


স্বামীর এমন সুন্নতি জীবন বড় ভালো লাগে মিলির। প্রথম দিকে এই জীবনে মানিয়ে নিতে খানিকটা ঝামেলা অবশ্য হয়েছিলো৷ কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই ঝামেলা এখন ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে৷ যাকে তার বান্ধুবীরা এক সময় জেলখানার জেলার বলে খেপাতো, সেই জেলারকে এখন তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরিপূরক মনে হয়।


বিয়ের মাস দুয়েক পর মিলি বাপের বাড়ি গেলো৷ তার ছোট বোন শেলি কাছে এসে হাসি হাসি গলায় বললো- আপা তোমাকে একটা নামে ডাকি?


মিলি অভয় দিয়ে বললো, কি নামে ডাকবি? ডাকতো শুনি!


- তুমি আবার মারবে না তো?


- না, মারবো না। কথা দিলাম।


হুজুরের বউ হুজুরনি। কথাটি বলেই শেলি এক ছুটে দৌড়ে পালালো।


মিলি অল্প করে হাসলো। অথচ মাস দুয়েক আগে ঘরে যখন তার বিয়ের কথা চলছিলো, তখন এই কথাটি বলার কারনেই তার হাতে শেলি পিঠের উপর ধিরিম ধিরিম গোটা কয়েক কিল খেয়েছিলো।


বিকালে হেলাল উদ্দিনের ফোন আসলো। ডিম ভাজতে গিয়ে গরম তাওয়ায় নিজের হাত পুড়ে ফেলেছে।


খবর শুনে মিলি হাউমাউ করে বাচ্চাদের মত কাদতে শুরু করে দিলো। ব্যস্ত হয়ে ব্যাগ গোছাতে গোছাতে ছোট ভাই মফিজুলকে ডাকলো। মফিজুল কোথায় তুই? তাড়াতাড়ি এখানে আয়৷ আমাকে বাড়ি দিয়ে আয়।


আড়াল থেকে মরিয়ম বেগম এই দৃশ্য দেখে চোখজোড়া থেকে কয়েকফোটা চোখের পানি ঝড়ালেন। উপরের দিকে চেয়ে জোড়া হাত বুকে চেপে ধরে মনে মনে আল্লাহকে ডাকলেন। ইয়া মাবুদ, মেয়েটা যেন আমার সারাজীবন এমনি থাকে। স্বামী সংসার নিয়ে মা যেন আমার আরো ভালো থাকে। 


অচিরেই মরিয়ম বেগম চোখের পানি মুছে ফেলে ছেলে মফিজুলকে ডাকতে ব্যস্ত হলেন।


মফিজুল, বাবা মফিজুল..! কোথায় গেলিরে তুই বাবা?


সত্যমনা লেখক, মনির হোসেন। 

সত্যমনা ডট কম। 


আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন

COMMENTS

নাম

article,21,Atheism,34,comparative-religion,3,converted-muslim,12,current-issue,33,disproof,10,Dogma,6,dua-ruqyah,1,face-the-letter,2,feminism,13,free-thinking,9,freedom,12,Islam,2,Liberalism,4,Literature,5,question-answer,25,Quran,4,Robiul Islam Official,2,science,5,secularism,4,secularist,8,story,14,
ltr
item
সত্যমনা: নারীবাদীর কুমন্ত্রণায় ভাঙলো না মিলির সংসার।
নারীবাদীর কুমন্ত্রণায় ভাঙলো না মিলির সংসার।
বিয়ের অল্পকিছুদিনের মধ্যে-ই মিলির ভেতরে অনেক পরিবর্তন চলে এলো। এক মাসের ব্যবধানে তার মনে হলো বিয়েটা নিয়ে যতটা ভয় আর আতঙ্কে সে ছিলো বিষয়টা মোটেও তেমন ন
https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEinbwAIvpviUzf2ngY6oHo-AuvqQIlunggXBVZ5hZEdC9kFro3XIRXAe-Z_TpeDzt3-V_u8Y3b-P_1gMGwezvrLwRJEvrWIpudf9ce2ko9Nb5pgtCxmLaiVvdMJZ4zETotqyFwffkpJ7zlHx3s7NbYQj_x0L-yyoQvUAewGTwYTBb_lD5yNsdb_EePE=s320
https://blogger.googleusercontent.com/img/a/AVvXsEinbwAIvpviUzf2ngY6oHo-AuvqQIlunggXBVZ5hZEdC9kFro3XIRXAe-Z_TpeDzt3-V_u8Y3b-P_1gMGwezvrLwRJEvrWIpudf9ce2ko9Nb5pgtCxmLaiVvdMJZ4zETotqyFwffkpJ7zlHx3s7NbYQj_x0L-yyoQvUAewGTwYTBb_lD5yNsdb_EePE=s72-c
সত্যমনা
https://www.sotto-mona.com/2022/01/story-feminist-millies-family.html
https://www.sotto-mona.com/
https://www.sotto-mona.com/
https://www.sotto-mona.com/2022/01/story-feminist-millies-family.html
true
8059754538313808851
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All জনপ্রিয় পোস্ট পড়ুন LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content