এটা আমার প্রশ্ন না। যার প্রশ্ন তার নাম সাজিদ আলী। প্লিজ জবাব দিবেন এই মর্মে যে, তাদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে কিনা!- রায়হান আহমাদ।
প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে আপনি কোনরকম না জেনে সাজিদ আলি ভাইকে মনগড়া ব্যাখ্যা না দিয়ে এই আয়াতের উপর "فاساُل اهل الذكر إن كنتم لاتعلمون" (যদি না জেনে থাক তাহলে যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো) আমল করার চেষ্টা করেছেন। যেটা অধিকাংশ মানুষের কাছেই উপেক্ষিত। যার দরুন অনেক সাধারণ মুসলমানদের ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তাই একটা কথা মুখস্থ করে নিন; "আপনি কোন প্রশ্নের উত্তর জানেন না তার মানে এই নয় যে সেটা কেউ জানে না"
উত্তরঃ না, এখানে অবিচারের প্রশ্নও উঠবে না। কারণ পাপের যেই মূল শাস্তি দেয়া হবে সেটা বিচার দিবসের পর হবে।
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আর চুরান্ত প্রতিদান দেয়া হবে তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন (বিচার দিবসে)।
(আল ইমরান - ১৮৫) /( সুরা গাফির- ৪৫) ইত্যাদি।
সুতরাং এখন আর উক্ত আপত্তি অবশিষ্ট থাকে না।
এখন নতুন যেই আপত্তিটা উত্থিত হবে সেটা হলো, তাহলে কবরে শাস্তি কেন হবে?
কোন অপরাধী যখন গ্রেফতার হয় তখন বিচারের পূর্ব পর্যন্ত তাকে কারাবদ্ধ থাকতে হয়। এটাও একপ্রকার শাস্তি। কিন্তু এই শাস্তিটা তার মূল শাস্তির সঙ্গে যোগ হয় না। এটা আমরা সবাই জানি।
আর এই অপেক্ষার সময়টা অর্থাৎ কবরের মুয়ামালাতটা হবে আপেক্ষিক। কবরে যারা সম্মানিত তাদের সম্মান। আর যারা নিকৃষ্ট তাদের শাস্তি -অপমান করা হবে। ঠিক দুনিয়ার মতোই।
যখন কোন প্রাণপ্রিয়, সম্মানিত ব্যাক্তি আসে তখন তাকে যথেষ্ট সম্মান করা হয়।আর ঘোরতর শত্রু (অপরাধী) যখন আসে তখন............।
দুনিয়াতে তাও তো নির্দোষদের বিচারের পূর্বের শাস্তি ভোগ করা অত্যাবশ্যক। কিন্তু আল্লাহর সেই সুনিপুণ বিচারে নির্দোষদের কোন শাস্তি ভোগ করতে হবে না।
উপরোক্ত লেখা পড়ে দুই ভাই আপত্তি করে বলেন: দুইজন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে মারা গেলে একই পাপ করেও কম বেশি সাজা পেতে হবে "কবরে"?? - Shaon joy and opurbo.
উত্তরঃ আমাদের কাছে গালাগালি না করে কমেন্টেও যদি কেউ যুক্তিযুক্ত কোন আপত্তি তুলতে পারে। তাহলে নিঃসন্দেহে তার সঠিক উত্তর দেওয়া হবে ইনশা আল্লাহ।
কবরের শাস্তি যে তার পাপের চুরান্ত শাস্তি নয় বরং চুড়ান্ত শাস্তি হলো বিচার দিবসের পর। এবং কবরের শাস্তি কেন হয় তা আমরা রেফারেন্স সহ উপরেই উল্লেখ করেছি।
এখন প্রশ্ন হলো একই ধরনের দুইজন পাপী ব্যাক্তি, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে মারা গেলে তাদের শাস্তি কি কমবেশি হলো না!
প্রথমত, কবরের শাস্তি হয় দুই ধরেনের লোকের।
১/ কিছু নির্দিষ্ট গুনাহের কারণে যা রসূল (সঃ) বলে গিয়েছেন। এ শাস্তিটা মুসলিম অমুসলিম সবাইকেই পেতে হবে। নির্দিষ্ট পরিমান।
২/ চিরস্থায়ী জাহান্নামীদের।
প্রথমশ্রেনীর লোক হলো যারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়। কবরে তাদের নির্দিষ্ট পরিমানই শাস্তি দেওয়া হবে, যতটুকু তারা প্রাপ্য। চাই তাদের মৃত্যুর সময় যতই ডিফরেন্ট হোক না কেন! কেননা আল্লাহ জানেন কেয়ামত কবে হবে। সে অনুপাতে শাস্তি দানেও সক্ষম।
إن الله عنده علم الساعة
উদাহরণ, ধরুন কোন গ্রামে চুরি করলে শাস্তি দেওয়া হয় ত্রিশটি বেত্রাঘাত। নির্দিষ্ট কিছু সময়ের মধ্যে। মাসের এক তারিখ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে। এখন রাশেদ নামের একজন লোক চুরি করে ধরা খেল মাসের এক তারিখে আর তারই বন্ধু খালেদ ধরা খেল ১৫ তারিখে। এখন চেয়ারম্যান যেহেতু নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে অবগত। সেহেতু চেয়ারম্যান সাহেবের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উভয়ের শাস্তির সমতা বিধানে বেগ পাবার কথা নয়। যেমনঃ রাশেদকে বেত্রঘাত করা হলো প্রতিদিন একটি করে আর তার বন্ধুকে দুইটি করে।
দ্বিতীয়ত, যারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে তাদের বেলায় তো সোজাসাপটা হিসেব। যাবৎমরন। মৃত্যুর পর থেকে শাস্তি পেতে থাকবে। এটাই তাদের অবধারিত শাস্তি। চাই তাদের মধ্যে সময়ের যতই ডিফারেন্স থাকুক না কেন!! তাদের বেলায় সময় মেটার করবে না।
• বিষয়টি আসলেই যৌক্তিক।
উদাহরণ সরূপ, ধরুন রাশেদ আর তার চাচা যাবজ্জীবন দন্ডিত কোন অপরাধ করলো। রাশেদের বয়স ২০ আর তার চাচার ৬০ ছুইছুই। অতঃপর চাচা ১০ বছর শাস্তি ভোগ করে ৭০ বছর বয়সে মারা গেল। আর ভাতিজাও সেইম বয়সে মারা গেল ৫০ বছর সাজা ভোগ করে। এখন আমার প্রশ্ন একই দণ্ডে দণ্ডিত দুইজন ব্যাক্তির শাস্তি এত ভিন্ন কেন! এটা কি যৌক্তিক! ভাতিজা যদি চাচার মত ১০ বছর সাজা ভোগ করে বলতো "আমাকে ছেড়ে দিন আমার শাস্তি শেষ হয়ে গেছে" তখন কি তাকে ছেড়ে দেয়াটা যৌক্তিক হত??
আপনি নিঃসন্দেহে বলবেন, না ব্যাপারটা মটেও যৌক্তিক হত না। কারণ তাদের সাজা হলো চিরস্থায়ী। কে কত বছর বাচলো, কত বছর সাজা ভোগ করলো সেটা মেটার করবে না।
ঠিক এরকমই হলো চিরস্থায়ী জাহান্নামীদের ক্ষেত্রে, কে কবে মারা গেল? সময়ে কত ডিফারেন্স? এগুলো এখানে ধর্তব্য না।
চিরস্থায়ী জাহান্নামী হলে মৃত্যুর পর আজীবন সাজা ভোগ করা লাগবে এটাই ধর্তব্য।
সত্যমনা লেখক, রবিউল ইসলাম।
সত্যমনা ডট কম।
COMMENTS