ডাক্তার সাহেব! অন্তত আপনার মুখে সাম্প্রদায়িক টাইপের কথা মানায় না। আপনি হইলেন গিয়ে মানবতার সেবক। মানবতার কল্যাণকামী। শেষমেশ আপনিও! খুব অবাক ভঙ্গিতে বললেন অধ্যাপক সামছুল হক। তিনি পেশাদার শিক্ষক বলেই হয়তো মানুষকে এভাবে বুঝাতে পারেন। প্রায় দেড় ঘন্টা ইকবাল ডাক্তারের সাথে তর্ক করে শেষমেশ হতাশ হয়েই তিনি উঠে আসলেন। আর মনে মনে ভাবতে লাগলেন মানুষ কেন এতো স্বার্থপর! আর কেনই বা এতো সাম্প্রদায়িক!
অধ্যাপক সামছুল হক আন্তঃধর্মীয় সমালোচনা একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। তার কথা হচ্ছে, সব ধর্মই সঠিক। সব ধর্মই সমান। কোন ধর্মকে অন্য ধর্মের উপর প্রাধান্য দিতে চাওয়া ঠিক নয়। এই জায়গাতেই ইকবাল সাহেবের আপত্তি।
তিনি বিনয়ের সাথে বললেন, আচ্ছা অধ্যাপক সাহেব! একইসাথে সব ধর্ম সঠিক হয় কী করে? কেননা একটা সঠিক হলে তো অন্যগুলা বেঠিক হওয়ার কথা। আর তাই যদি হয়! তাহলে তো সকল ধর্ম সমান হবে না।
এই কথার পরিপ্রেক্ষিতেই সামছুল হক ইকবাল ডাক্তারকে বলেছিলেন তিনি নাকি সাম্প্রদায়িক টাইপের কথা বলছেন। এই ঘটনা দু'মাস আগেকার। যখন সামছুল হক তার স্ত্রীর চেকআপ করাতে খিদমাহ হসপিটালে গিয়েছিলেন। ইকবাল সাহেব সেখানকারই একজন সিনিয়র ডাক্তার। প্রতিবেশী সুবাদে সামছুল হককে চিনেন তিনি। তাছাড়াও তিনি ইকবাল সাহেবের বড় ছেলের শিক্ষক।
দু'মাস পরও ইকবাল সাহেব তার প্রশ্নের উত্তর পাননি। সেটা তার কষ্টের কারণ নয়। কষ্টের জায়গাটা হলো একটা যৌক্তিক প্রশ্ন করার কারণে কেন অধ্যাপক সাহেব তার উপর ক্ষেপে গেলেন! যদিও আগে থেকেই তিনি তার স্বভাব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। তবে তা এতটা প্রখর হবে ভাবেননি তিনি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রভাষক রিতু কুন্ডু হিন্দু ধর্ম থেকে ফিরে এসে ইসলাম গ্রহণ করাটা সামছুল হককে বেশ কষ্ট দিয়েছিল। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন ফেইসবুক স্ট্যাটাসে।
তিনি লিখেছিলেন-
বাংলাদেশের মুসলমান আজ এমন একটা বিষয়কে আনন্দে ভাইরাল করছে। যা খুবই দুঃখজনক! একজন মানুষ হিন্দু থেকে মুসলিম কিংবা মুসলিম থেকে হিন্দু ধর্ম কেন গ্রহণ করবে? এতে তো সাম্প্রদায়িকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। হিন্দু থেকে মুসলিম হলে হিন্দু সম্প্রদায় মনোক্ষুণ্ণ হয়। আর মুসলিম থেকে হিন্দু হলে মুসলমানরা মনোক্ষুণ্ণ হয়। তাহলে কী দরকার একে অপরকে মনোক্ষুণ্ণ করার! প্রত্যেকটা ধর্মই তো সমান। সবচেয়ে ভালো হবে, সবগুলো ধর্মের ভালো দিকগুলো বাছাই করে সবাই এক ধর্মের অনুসারী হওয়া। যেই ধর্মের নাম হবে মানবধর্ম। তাহলে কোন ধর্মের উপর বে-ইনসাফি করা হবে না।
পোস্ট করার পর থেকেই কমেন্ট বক্সে সমানে মন্তব্য আসতে থাকলো। অধিকাংশই তার বিপক্ষে।
একটা মন্তব্য ছিল এমন যে, ধর্ম কাকে বলে? ধর্ম কী? কেন এসেছে? কোত্থেকেই বা এসেছে? আপনার তো এর ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ধারণা নাই।
আরেকজন খুব মজা করে বললো: ভাই! আপনি ধর্মের ব্যাপারে এতই অবিজ্ঞ যে, তাৎক্ষণিক একটা ধর্মের সৃষ্টি করে ফেলেছেন। মানবধর্ম। হাহাহা। ধর্মের স্রষ্টার হয়ে গেলেন!
যেই মন্তব্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া এসেছে সেটি হলো- আসলে ভাই! ধর্ম কেউ মনের ইচ্ছায় পালন করে না। ধর্ম এসেছে স্রষ্টার পক্ষ থেকে। আর স্রষ্টা হলেন একজন। অতএব সঠিক ও সত্য ধর্মও হবে একটি। এখন যেহেতু কারণে অকারণে অনেক ধর্মের সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। তাই সঠিক ধর্মকে খুঁজে বের করে তা পালন করা সকলের জন্য আবশ্যক। সত্য-মিথ্যাকে গুলিয়ে সবাইকে সমান ভাগে ভাগ করে দেয়াকে ইনসাফ বলে না, বলে জুলুম।
একটা মন্তব্যেরও প্রতিত্তোর দেননি অধ্যাপক সামছুল হক। কেননা তিনি তা পছন্দ করেন না। তাই তার পক্ষ থেকে মন্তব্যগুলোর কোন জবাব জানা যায়নি।
আজ হঠাৎ সামছুল হকের স্ত্রীর প্রচন্ড পেটে ব্যথা শুরু হয়েছে। ইকবাল সাহেবের পরামর্শে তিনি তড়িঘড়ি করে স্ত্রীকে হসপিটালে নিলেন।
স্ত্রী এখন অটিতে। চিন্তা ও অস্থিরতায় সামছুল হকের মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম। একবার উঠছেন, একবার বসছেন। অটির দরজায় গিয়ে আবার ফিরে আসছেন। এভাবেই চলতে লাগলো...
প্রায় আধঘন্টা পর একজন মহিলা ডাক্তার বেরিয়ে আসতেই তিনি দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন; আমার স্ত্রীর কী অবস্থা ডাক্তার? মহিলা ডাক্তার মুস্কি একটি হাসি দিয়ে বললেন; মা সন্তান উভয়ই ভালো আছেন। ছেলে সন্তান হয়েছে। কিন্তু ...
বলেই মুখের সেই হাসিটা মিলিয়ে গেল।
আকস্মিক মুখের পরিবর্তন দেখে সামছুল হক ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন; কিন্তু কী ডাক্তার? বলুন, বলছেন না কেন?
কিন্তু এই সন্তানের আসল বাবা কে সেটা আমাদের জানতে হবে; পেছন থেকে বললেন রামপুরা থানার অসি শফিকুল ইসলাম। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ইকবাল সাহেব ও বেশ কয়েকজন লোক।
কপাল ও ভ্রূ কুঁচকে সামছুল হক বললেন; আসল বাবা কে মানে? কী বলছেন আপনারা?
তাকে থামিয়ে দিয়ে শফিকুল ইসলাম বললেন; এই চারজন ব্যক্তিও এই সন্তানের বাবা হিসেবে দাবি করছে। আপনি এই ব্যাপারে কী বলেন?
উচ্চস্বরে ও রাগান্বিত হয়ে সামছুল হক বললেন; কীসব আবলতাবল কথা বলছেন আর এরা কারা? কীভাবে তারা আমার সন্তানের বাবা হবে!
শুরু হলো পাঁচ জনের কথা কাটাকাটি,
এ বলে সন্তান আমার, সে বলে; না, সন্তান আমার। একটা হুলুস্থুল অবস্থার সৃষ্টি হলো। ইকবাল সাহেব ধমক দিয়ে সাবাইকে বললেন; থামেন আপনারা। এটা একটা হসপিটাল। আপনারা এভাবে চিৎকার করলে রোগীদের অসুবিধা হবে। তারচেয়ে বরং শান্তিপূর্ণ ভাবে সমস্যাটা মিটিয়ে নিন। কী বলেন অসি সাহেব?
রাইট রাইট বলে তিনি সহমত পোষণ করলেন।
সাবাইকে বসতে বলে অসি সাহেব বললেন; দেখুন মি. সামছুল সাহেব! আমরা কোন ঝামেলায় যেতে চাচ্ছি না, শান্তিপূর্ণ একটা মিমাংসা চাচ্ছি। সবাই দাবি করছেন একই সন্তানের পিতা আপনারা পাঁচজন। বিষয়টা ইন্টারেস্টিং। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আজ থেকে আপনারা পাঁচজন-ই এই সন্তানের বাবা। সন্তানের অধিকারের দিক থেকে আপনারা পাঁচজন-ই সমান।
সামছুল হক রেগেমেগে বললেন; এটা কি তামাশা হচ্ছে! আমার সন্তানকে আপনি অন্যদের মাঝে ভাগ করে দিচ্ছেন!! মেনে নিলাম তারা পিতা দাবি করছে, কিন্তু তারা যে আসলেই পিতা তার প্রমাণ কী? আর একজন সন্তানের কি পাঁচজন পিতা হয় যে, আপনি সবাইকে সমান ভাগে ভাগ করে দিচ্ছেন!? আপনাদের যদি সত্যিই জানার থাকে যে এই সন্তানের পিতা কে, তাহলে আমার সন্তানের ডিএনএ টেস্ট করুন। আরও অন্যান্য উপায়ে প্রমাণ করে দেখুন কে এই সন্তানের বাবা?
শফিক সাহেব বললেন; কী দরকার বলুন! এসব দলিল প্রমাণের পিছনে পড়ার। তাছাড়া একজনের পক্ষে ফায়সালা গেলে বাকি চারজন মনোক্ষুণ্ণ হবে এবং ডিএনএ টেস্টকেও মানুষ সম্মানজনক মনে করে না। এর চেয়ে ভালো হয় না যে, সবাই একসাথে মিলেমিশে সন্তানের দেখাশোনা করবেন।
কস্মিনকালেও না; চিৎকার দিয়ে উঠলেন সামছুল হক। তারা মনোক্ষুণ্ণ হলে আমার কোন যায় আসে না। সত্যটা সবাইকে মানতেই হবে।
এতক্ষণ পর ইকবাল সাহেব বললেন ঠিক, সত্যটা সবাইকে মানতেই হবে। সেটা সন্তানের ক্ষেত্রে হোক কিংবা ধর্মের ক্ষেত্রে হোক। সন্তানের পিতা যেমন একাধিক হতে পারে না, স্রষ্টাও তেমন একাধিক হতে পারে না। একজন স্রষ্টার একটাই ধর্ম। সেই একটাই সত্যধর্ম, বাকীগুলো মিথ্যে। সেই ধর্মকে খুঁজে বের করে তা গ্রহণ করা সাম্প্রদায়িকতা নয়, ন্যায় বিচার। বরং সত্যমিথ্যা গুলিয়ে ফেলে সবকিছুকে সমান মনে করা অবিচার।
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে শামসুল হক, আমতাআমতা করে বললো; তার মানে এসমস্ত কিছু নাটক ছিলো। তারা আসলে...
তাকে থামিয়ে দিয়ে শফিক সাহেব বললেন; সরি মি. সামছুল সাহেব। এ সবটাই নাটক ছিলো। ইকবাল আমার বন্ধু। সে বেশ কিছুদিন আপনার বিষয়টা নিয়ে আপসেট ছিল। তার ও আপনার বিষয়টি ভেবেই এতকিছু করা। ক্ষমা করে দিবেন। আপনাকে বেশ কষ্ট দিয়ে ফেললাম।
অনুতপ্ত মুখে সামছুল সাহেব আর কোন কথা বললেন না। ইকবাল সাহেবকে জড়িয়ে ধরে বললেন; আপনি ঠিকই বলেছেন সত্যটা সবাইকে মানতেই হবে।
সত্যমনা লেখক,
রবিউল ইসলাম।
সত্যমনা ডট কম।
আল্লাহ আমাদের সহিহ বুঝ দিক।
উত্তরমুছুনজাজাকাল্লাহ খাইরান।
মুছুনসত্যমনার পাশে থাকুন, পড়ুন, মন্তব্য করুন এবং সেয়ার করে দ্বীনি কাজে শরীক থাকুন।
Actually, those people fear about his power(Means, currentgovernment, hasina government, ) I am in an INDIAN
উত্তরমুছুনBut I regularly seen the news of BANGLADESHI🇧🇩 ,INSAALLAHA Once JAMAT GOVERNMENT will come shortly