স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করা মানুষের জন্য যতটা সহজ, আনন্দনীয়, স্বার্থোদ্ধত, তা অকল্পনীয়!
স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করার জন্য মানুষের মন প্রতিনিয়ত প্ররোচিত হচ্ছে। দুনিয়াতে কে না চায় নিজের মনচাহি জিন্দেগী লিড করতে!
স্রষ্টার আদেশ নিষেধের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে! কেবল খেয়ে-দেয়ে এই মস্ত বড় দুনিয়াতে ফুর্তি করতে!? সেই কামনাই মানুষের মনকে সত্য গ্রহণে বাধা দেয় চরম ভাবে।
অথচ স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার করলেই আত্মসমর্পণ করতে হবে, মেনে নিয়ে হবে সকল বিধিনিষেধ। গোটা জীবনের শৃঙ্খল সঁপে দিতে হবে রবের পদতলে। না থাকবে মনচাহি জিন্দেগী, আর না থাকবে- যা ইচ্ছা তাই করার স্বাধীনতা।
সুতরাং স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার ও অস্বীকার করার পূর্বে মানুষের মনের যে অবস্থা সৃষ্টি হয়, তার মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান।
স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার ও অস্বীকার করা উভয়টা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে একইরকম সহজ কিংবা কঠিন নয়। এর মধ্যে রয়েছে বহুত তারতম্য।
উদাহরণ সরূপ কেউ আপনার কাছে ১০ লক্ষ্য টাকা পায়। এখন যদি আপনি তা অস্বীকার করেন তাহলে ১০ লাখের মধ্যে এক টাকাও আপনার দিতে হবে না। পক্ষান্তরে স্বীকার করলে গুণে গুণে ১০ লক্ষই দিতে হবে।
তাহলে ভাবুন তো এক্ষেত্রে আপনার মন কোন দিকে ধাবিত হবে? স্বীকার করার দিকে নাকি অস্বীকার করার দিকে? স্বীকার করাটা তখন আপনার জন্য এক প্রকার চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
যাইহোক এখন আমরা দেখবো সত্য মিথ্যার বিবেচনায় স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকারকারী ও অস্বীকার কারীর অবস্থানগত পার্থক্য ...
স্রষ্টার অস্তিত্ব যে স্বীকার করে, তাকে যদি সত্যবাদী ধরে নেয়া হয় তাহলে বিষয়টি এরকম হবে যে, স্বীকার করে ১০ লক্ষ্য টাকার ঋণের বোঝা সে কাঁধে তুলে নিলো। এমন স্বীকারোক্তির কারণে মানুষ এই ধরনের লোককে অতি সৎ ও সত্যবাদী সাব্যস্ত করে থাকে।
অথবা যদি আমরা তাকে মিথ্যাবাদী ধরে নেই তাহলে বিষয়টি এরকম হবে যে, ১০ লক্ষ টাকার ঋণ তার ছিল না। সে মিথ্যা মিথ্যা স্বীকার করে ঋণের বোঝা ঘাড়ে চাপিয়েছে। অর্থাৎ একজন লোকের এক টাকাও ঋণ না থাকা সত্বেও সে একজনকে স্বীকারোক্তি দিচ্ছে যে, আপনি আমার কাছে ১০ লক্ষ্য টাকা পান।
এর চেয়ে হাস্যকর বিষয় বোধহয় আর হতে পারে না। একজন মানুষ শুধু শুধু মিথ্যা বলে অন্যের গোলামি করতে যাবে। সারাজীবন তার আদেশ নিষেধ মানতে যাবে কোন দুঃখে! এমন নজির পুরো দুনিয়ায় একটাও পাওয়া যাবে না।
প্রথমত মিথ্যা বলা একটি নিন্দনীয় কাজ। তারপরও মিথ্যা বলে মানুষ কিছু ফায়দা লাভের আশায়। যেমন কোন শাস্তি থেকে মুক্তি পাবার আশায় অথবা কষ্ট থেকে রেহাই পেতে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু মিথ্যা বলে মানুষ উল্টো আরও কষ্ট ঘাড়ে চাপায়। এমনটা কখনো শুনিনি!
স্রষ্টার অস্তিত্ব যে অস্বীকার করে, তাকে যদি আমরা সত্যবাদী ধরে নেই তাহলে বিষয়টি এরকম হবে যে, ১০ লক্ষ্য টাকার ঋণ সে অস্বীকার করছে। কেননা মূলত সে ঋণ নেয়নি। বরং তার উপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে সে সত্যবাদী হলেও মানুষ তা মেনে নিতে চাইবে না এই কারণে যে, টাকা দেয়ার ভয়ে যে কারো পক্ষে বিষয়টি অস্বীকার করা স্বাভাবিক। সবাই তো নিজেকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা সাক্ষী দেয়। এমনকি আদালত পর্যন্ত নিজের কিংবা পরিবারের সাক্ষ্যগ্রহণ করে না। যদিও তারা সত্য বলে থাকে। কারণ স্বভাবতই মানুষ নিজেকে বাঁচানোর জন্য, স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মিথ্যা বলে থাকে। সেটা হতে পারে স্রষ্টার গোলামী থেকে মুক্তি পাওয়ার স্বার্থে।
আর স্রষ্টার অস্তিত্ব যে অস্বীকার করে, তাকে যদি আমরা মিথ্যাবাদী ধরে নেই তাহলে বিষয়টি এরকম হবে যে, সে ঋণী হওয়া সত্বেও ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ১০ লক্ষ্য টাকার কথা অস্বীকার করেছে।
যেমনটা আমি একটু পূর্বেই উল্লেখ্য করেছি যে, নিজেকে বাঁচানোর জন্য, কোন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মিথ্যা বলাই মানুষের স্বভাব। এটা একেবারেই কমন একটা বিষয়।
সুতরাং এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যদি কেউ স্রষ্টাকে অস্বীকার করে বলে- খাও দাও ফুর্তি করো দুনিয়াটা মস্ত বড়...
সত্যমনা লেখক,
রবিউল ইসলাম।
সত্যমনা ডট কম।
COMMENTS