ট্রাফিক সিগনালে সারিবদ্ধ গাড়ি। তেজগাঁও রেললাইন থেনে শুরু করে কাওরান বাজার মোড় পর্যন্ত জ্যাম। প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁও যেটি বাংলাদেশের পাঁচ তারকা হোটেল। কাওরান বাজারের পাশেই অবস্থিত। হোটেল সোনারগাঁও এর সামন দিয়ে ক্যামেরা হাতে ছুটে যাচ্ছে মুন্নী। কাঁদে ব্যাগ। জিন্সের প্যান্ট পড়া। গেঞ্জির ওপরে কোট পড়েছে। চুলগুলো খাটো খাটো। পুরুষের চুলের মতো। কবিতা বসুন্ধরা মার্কেট থেকে বের হয়ে হোটেল সোনারগাঁও এর সামন দিয়ে বাসায় ফিরছিলো। মুন্নী আর কবিতা মুখোমুখি হলেন। কবিতা মুন্নীকে দেখেই চিনতে পারলো। কিন্তু কবিতা বোর্কা, হিজাব, নিকাব পড়ায় মুন্নী তাকে চিনতে পারলো না।
কবিতা: কিরে মুন্নী কেমন আছোস তুই?
মুন্নী উত্তর না করে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কণ্ঠটা তার পরিচিত মনে হচ্ছে।
মুন্নী: তুই কি কবিতা? হ্যাঁ, আমি কবিতা।
মুন্নী অবাক হয়ে গেলেন।
যাদের শৈশব কৈশোর একসাথে কেটেছে। ভার্সিটির জীবনেও একসাথে লেখাপড়া করেছে। অন্তরাত্মায় স্থান পাওয়া বান্ধবীর প্রশ্নের উত্তর দিলো না। জিজ্ঞাসাও করলো তুই কেমন আছিস।
বরং জিজ্ঞেস করলো, তোর এই অবস্থা কী করে হলে! তোকে তো কালো ভুতের মতো দেখাচ্ছে। তুই আধুনিক কালের মেয়ে হয়ে আদিম যুগে ফিরে গিলে কিকরে?
কবিতা: আচ্ছা, আমার আদিম যুগে ফিরে যাওয়ার গল্পটা এতো ইম্পর্ট্যান্ট না। আগে বল তুই কেমন আছিস?
মুন্নী : ভালো আছি, কিছুটা অমনোযোগী হয়ে।
কবিতা: তুই মনে হয় খুব ব্যস্ত? তোর চেহারায় ব্যস্ততার ছাপ।
মুন্নী: হ্যাঁ, একটু ব্যস্ত। একটা রিপোর্ট করতে যাচ্ছি। কিন্তু তোকে এ অবস্থায় দেখে মনে হচ্ছে আগে তোকে নিয়ে একটা রিপোর্ট করি।
কবিতা: তাই নাকি! তাহলে তো ভালোই। জীবনের প্রথম কেনো সাংবাদিক আমাকে নিয়ে রিপোর্ট করবে। আমার আনন্দ পাচ্ছে।
মুন্নী : মজা করিস না। আমি সিরিয়াস বলছি। তোকে নিয়েই একটা রিপোর্ট তৈরি করা আবশ্যক।
কবিতা: তো আমাকে নিয়ে কী রিপোর্টে করবি? আমি তো সেলিব্রিটি কিংবা তেমন কোনো উল্লেখ যোগ্য মেয়ে না।
মুন্নী: তোর এই বস্তাবন্দি জীবন নিয়ে কলাম লেখা উচিৎ। তোকে আদিম যুগে পাঠিয়ে দিলো কে? তোকে কে বাধ্য করলো বস্তাবন্দি হতে?
কবিতা: এতো দিন পর দেখা। কোথায় একটু ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করবি। তা না। পড়ে আছোস আমার পোশা নিয়ে। দেখ, আমাকে কেউ বাধ্য করেনি বোরকা পড়তে। আমি নিজের ইচ্ছায় পড়েছি।
কিন্তু বিপরীতে তুই কিন্তু বাধ্য হয়েই জিন্স, গেঞ্জি আর কোর্ট পড়েছিস। তোকে এক প্রকার বাধ্য করা হয়েছে খোলামেলা পোশাক পড়তে।
মুন্নী: কিভাবে আমাকে বাধ্য করা হলো। একটু ব্যখ্যা করে বুঝা।
কবিতা : আচ্ছা , তুই কি বোরকা পড়ে রিপোর্ট করতে যেতে পারবি? বোরকা পড়ে তোকে সংবাদ পাঠ করার সুযোগ দিবে? কখনোই দিবে না। তুই চাইলেও সম্ভব নয় তোর পক্ষে বোরকা পড়ে রিপোর্ট সম্প্রচার করা কিংবা সংবাদ পাঠ করা। তুই চাকরি বাঁচাতে চাইলে তোকে এভাবেই খোলামেলা পোশাকই পড়তে হবে। এখন চিন্তা করে দেখ, পোশাকের ক্ষেত্রে স্বাধীন তুই নাকি আমি? দেখ মুন্নী, সবসময় নারী অধিকার নিয়ে তুই সোচ্চার ছিলি। কিন্তু চিন্তা করে দেখ, তুই নিজেই অধিকার বঞ্চিতা। এই তো গেলো তোর সাংবাদিকতার পেশা। এমন শত শত সেক্টরে অসংখ্য নারী কাজ করেন, যারা নিজের ইচ্ছায় হিজাব কড়তে চাইলেও পরতে পারে না। একটু ভেবে দেখিছ...।
মুন্নী অনেকটা স্থীর হয়ে গলা খক্খকানি দিলো।
কবিতা বললো, আচ্ছা আমাকে নিয়ে আর তোর কলাম লিখগে হবে না। তাড়াতাড়ি যা। তোর রিপোর্ট করার কাজ কর।
মুন্নী রিপোর্ট করতে গেলো ঠিকই। কিন্তু পরের দিন পত্রিকার সপ্তম পাতায় একটা কলামও বের হলো। যে কলাম জুড়ে ছিলো কবিতার কথাগুলো।
সত্যমনা লেখক
আহমাদ আব্দুর রাজ্জাক
Ahmad Abdur Razzak
Masallah
উত্তরমুছুন