[১] নারীবাদী আন্দোলন শিক্ষাক্রমে স্থান পেয়েছে বহু আগেই।
আমাদের সময় আমরা বায়োলজি বইয়ে 'বিবর্তনবাদের সীমাবদ্ধতা' পড়তাম। এখনকার কারিকুলামে বিবর্তনবাদ নাকি অবিতর্কিত ধ্রুব সত্য।
এবার সরাসরি কোনো রাখঢাক না করে সরকারি পাঠ্যপুস্তকে ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণীর বাচ্চাদের বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হল 'ট্রান্সজেন্ডার আন্দোলন'।
এভাবেই অনুদানের শর্ত হিসেবে প্রাচ্যের সমাজে (স্পষ্টত মুসলিম সমাজে) পশ্চিমা ব্যবসাবান্ধব সামাজিক আন্দোলনগুলো প্রবেশ করানো হলো। মানুষের স্বাভাবিক জীবন, স্বাভাবিক পরিবার কাঠামো, স্বাভাবিক সমাজ ধ্বংস করে সবকিছুকে ব্যবসানুকূল করাই এদের লক্ষ্য।
আর জনমনে এর অনুমোদন তৈরি করতে ব্যবহার করা হবে সায়েন্সকে। সায়েন্স নামক টুল দিয়ে প্রমাণ উৎপাদন, জার্নাল নামক উচ্চ-ফান্ডিং বায়াস মিডিয়া দিয়ে সেটা মজবুতকরণ, গণমাধ্যম দিয়ে সেটাকে কাভারেজ দেয়া। ব্যস।
এই কারিকুলামটা ১ বছর থাকলে হাজার হাজার ১০-১২ বছরের শিশু (যার সম্মতি দেবারই অধিকার নেই) সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে বিপরীত লিঙ্গ হবার। নিশ্চিত থাকুন আমার-আপনার নিকটজন কেউ না কেউ থাকবে। আগে হলে হয়ত সে বাস্তবতা মেনে নিতো, মনে উদয় হলেও ব্যাপারটাকে পাত্তা দিতো না। ছোট থেকে রান্নাবান্না ভালো লাগলে হয়ত বড় হলে শেফ হতো, হোটেলে-কমিউনিটি সেন্টারে বাবুর্চি হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ত। এখন এই বই পড়ে সে চিন্তা করবে মেয়ে হবার। আগে ছেলেদের খেলা ভালো লাগলে হয়ত প্রমীলা ক্রিকেটার হতো, এখন এই বই পড়ে চিন্তা করবে ছেলেতে পরিণত হবার কথা।
মেয়েদের পোশাক পরতে ভালো লাগলেই সে পুরুষের-শরীরে-আটকে-পড়া-মেয়ে না। ট্রান্সভেস্টিজম প্র্যাক্টিস করে (বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরে) সেই ফিমেলকে ফিল করে, ফিমেল ড্রেসের সফটনেস তার এরাউজাল ঘটায়, এমন ফেটিশ হাই-টেস্টোস্টেরোন পুরুষের ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়। এর মানে এই না সে মেয়ে। কিন্তু এখন সে ভাববে 'আমি মনে হয় মেয়ে'। এই চিন্তাটাকে সে পেলেপুষে দানব বানাবে।
প্রথম কৈশোরে সমলিঙ্গের প্রতি ভুল আবেগ জন্ম নিলেও আগে সে জানতো 'এটা ঠিক নয়'। ধর্মীয়ভাবে এটা পাপ, সামাজিকভাবে এটা গর্হিত। ফলে সেলফ-মোটিভেশনের মাধ্যমে এদের বিরাট একটা অংশ ফেরত আসতো। স্বাভাবিক জীবন, আবেগকে আপন করে নিতো। সুস্থ জীবন-পরিবার-সমাজ চলতো। এখন তাদের স্বাভাবিক জীবনে আসার সেই রাস্তাটা বন্ধ হয়ে গেল। খাদের পথ থেকে ফিরে আসা আর হবে না এদের, পড়তে হবে খাদেই।
হাজার হাজার শিশু অমানবিক মানসিক যাতনা (জেন্ডার ডিজফোরিয়া) নিয়ে বড় হবে। তাদের পরিবারগুলো অমানবিক মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করার জন্য তৈরি হোন। না পারবেন সেক্সচেঞ্জের খরচ মেটাতে, না পারবেন সইতে। একবছর এই কারিকুলাম চললে হাজার হাজার পরিবার সিম্পলি ধ্বংস হয়ে যাবে।
এখানেই শেষ না। বাড়বে আত্মহত্যার হার। বাড়বে এইডস। বাড়বে মাদকাসক্তি। বাড়বে ডিভোর্স। বাড়বে এলকোহল পান। আজ যদি চেয়ে চেয়ে তামাশা দেখেন, তখন চেয়ে চেয়ে যন্ত্রণা দেখবেন। ভাই-ভাতিজা-ভাগনিদের ও তাদের বাপমাদের মানসিক যন্ত্রণা।
[২] NCTB-এর অনুশীলন বইয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে শেখানো হয়েছে: আত্মপরিচয় কী? আত্মপরিচয় কেন গুরুত্বপূর্ণ? আমি নিজেকে যেটা মনে করি, সেটা আমার পরিচয়? নাকি সবাই আমাকে যেটা মনে করে, সেটা আমার পরিচয়?
এরপর একটা গল্প দেয়া হয়েছে: এক ভাল্লুক জঙ্গল থেকে বেরিয়েছে। মানুষরা দেখে মনে করছে ভাল্লুকটা একটা দাড়িমোছ না চাঁছা শ্রমিক। ভাল্লুক বার বার বলছে সে ভাল্লুক, কিন্তু কেউ মানছে না। সুতরাং অন্যরা আমাকে কী মনে করলো তা জরুরি না। আমি নিজে আমাকে কী মনে করি, সেটাই আমার পরিচয়।
আর ৭ম শ্রেণীতে শেখানো হচ্ছে: আত্মপরিচয় কত রকম হতে পারে? নারী-পুরুষ ফিক্সড কোনো পরিচয় না। পুরুষাঙ্গ থাকলেও শরীফ যদি মনে করো সে শরীফা, তাহলে সে শরীফা-ই। এটাই আত্মপরিচয়। জৈবিক পরিচয়ে সামাজিক পরিচয়ে সে আবদ্ধ না, আত্মপরিচয়ই তার পরিচয়। পুরুষ শরীরে (biological sex) পুরুষের মতোই জীবনযাপন (gender) করতে হবে, এমন না।
এটাই জন মানি নামক আমেরিকান মনোবিজ্ঞানীর বিখ্যাত 'জেন্ডার থিওরি' (১৯৭১)। জন মানি তার ভুল চিন্তাকে এপ্লাই করে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছিলেন দুই ভাইকে। ধ্বংস করে দিয়েছিলেন একটা ছেলের জীবন, তার পরিবারের জীবন। যখন তিনি তার থিওরিকে ছেলেটির উপর এপ্লাই করছিলেন তখন সপ্তায় সপ্তায় মিডিয়া কাভার করলেও, যখন এক্সপেরিমেন্ট ব্যর্থ প্রমাণ হলো তখন আর তা কাভারেজ পেলো না।
দেখুন জন মানির এই থিওরি, যা পড়ানো হবে আপনার সন্তানকে। এ কাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন আপনার সন্তানকে? এ কোন দুনিয়ায় রেখে যাচ্ছেন তাদের?
লেখক, ডা. শামসুল আরেফীন।
[৩]
হিজড়া আর ট্রান্সজেন্ডার কি একই জিনিস?
.
ইংরেজিতে য বলতে আমাদের সমাজে সাধারণত যা বোঝা হয় - দুটো এক না।
.
পশ্চিমা যৌন বিকৃতির আন্দোলনের যে অ্যাক্রোনিম বা সংক্ষেপিত রূপ আছে, সেটার বর্তমান রূপ হল LGBTQIA+।
.
লক্ষ্য করুন এখানে T হল ট্র্যান্সজেন্ডার আর I হল ইন্টারসেক্স। ট্র্যান্সজেন্ডার মানে হল শারীরিকভাবে সুস্থ এবং পরিপূর্ণ একজন নারী বা পুরুষ, যে মনে করে সে "ভুল দেহে আটকা পড়েছে"। অর্থাৎ সে "পুরুষের দেহে আটকা পড়া নারী" বা "নারীর দেহে আটকা পড়া পুরুষ"। ফলে এই ধরণের মানুষেরা বিপরীত লিঙ্গের অঙ্গভঙ্গি, পোশাক-আচরণ "অনুকরণ" এর চেষ্টা করে। কারণ সে মনে করে এটাই তার "প্রকৃত পরিচয়"।
.
অন্যদিকে ইন্টারসেক্স হল এমন একজন মানুষ যার মধ্যে শারীরিকভাবে নারী ও পুরুষ উভয়ের বৈশিষ্ট্য আছে। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী প্রতি ২০০০ জনে ১ জন মানুষ ইন্টারসেক্স বা হিজড়া হন। জনসংখ্যার ০.০৫%। এছাড়া বাকি ৯৯.৯৫% মানুষ হয় নারী অথবা পুরুষ। কাজেই ট্র্যান্সজেন্ডার এবং ইন্টারসেক্স, দুটো আলাদা জিনিস।
.
T আর I কে খোদ পশ্চিমারাও এক করে না। কিন্তু আমাদের দেশে ঠিক তাই করা হচ্ছে। ধোঁকার আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। ক্লাস সেভেনের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে "শরীফার গল্প" নামক অংশে ট্র্যান্সজেন্ডার এবং হিজড়া শব্দকে দেখানো হচ্ছে সমার্থক হিসেবে।
.
এটা করা হচ্ছে যাতে হিজড়াদের প্রতি থাকা সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা যৌনবিকৃতির স্বাভাবিকীকরণ করা যায়। মানবতা আর অধিকারের ট্রৌজান ঘোড়া ব্যবহার করে ওরা আমাদের সমাজে বিকৃত যৌনতার আকীদাহ প্রচার করতে চায়। একারণেই স্কুলের পাঠ্যবইয়ে দুটো এক করে দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে অবাধ যৌনতার মনস্তত্ত্ব।
লেখক, আসিফ আদনান।
COMMENTS