পর্দার নিয়ে কটুক্তি...
সেখানে একটা প্রপাগাণ্ডা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নাস্তিক্যবাদী প্রপাগাণ্ডা। পর্দানশিন মা বোনদের লাঞ্চিত করার প্রপাগাণ্ডা। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মনের মধ্যে পর্দার প্রতি বিদ্বেষ ঢুকানোর প্রপাগাণ্ডা।
অবাস্তব, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মন গড়া কাহিনী সাজিয়ে পর্দাশীল মা বোনদের কটুক্তি করেছে জাফর ইকবাল ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। তাদের এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গাল-গল্পের দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার আগে চলুন গাল-গল্প গুলো একবার দেখে নেই৷
ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বই। পৃ: ১২১। সপ্তম শ্রেণী। |
অবরোধবাসিনীর কাহিনি...
১. এক বাড়িতে আগুন লেগেছিল। গৃহিণী বুদ্ধি করে তাড়াতাড়ি সব গয়না একটা বাক্সে ভরে ঘরের বাইরে বের হলেন। দরজায় এসে দেখলেন একদল পুরুষ আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। তিনি তাদের সামনে বের না হয়ে আবার ঘরের ভেতরে গিয়ে খাটের নিচে বসলেন। সেই অবস্থায় পুড়ে মরলেন। তবু পুরুষের সামনে বের হলেন না।
২. এক ভদ্রমহিলা ট্রেন বদলের সময় বোরকায় জড়িয়ে ট্রেন আর প্লাটফরমের মাঝখানে পড়ে গেলেন। স্টেশনে সে সময় তার গৃহপরিচারিকা ছাড়া আর কোনো নারী ছিল না। স্টেশনের কুলিরা তাকে তোলার জন্য এগিয়ে এলো। কিন্তু গৃহপরিচারিকা বললেন, "খবর্দার! কেউ বিবি সাহেবার গায়ে হাত দিয়ো না। ” কিন্তু সে একা অনেক টানাটানি করেও কিছুতেই তাকে তুলতে পারল না। প্রায় আধাঘন্টা অপেক্ষা করার পর ট্রেন ছেড়ে দিল। ট্রেনের চাকার তলায় পিষে তার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল।
৩. একজন ডাক্তার গিয়েছেন রোগী দেখতে। ভদ্রমহিলার নিউমোনিয়া হয়েছে। তিনি ছিলেন পর্দার আড়ালে। ডাক্তার বললেন, স্টেথিস্কোপ লাগিয়ে ফুসফুসের অবস্থা দেখতে হবে; আমি পিঠের দিক থেকে দেখে নেব। কিন্তু ডাক্তারকে বলা হলো, স্টেথিস্কোপের নল গৃহপরিচারিকার হাতে দিতে। তিনি যেখানে যেখানে বলবেন, পরিচারিকা সেখানে নল রাখবে। তিনি পিঠে রাখবে বলে স্টেথিস্কোপের নলকে পর্দার ওপারে পাঠালেন। অনেকক্ষণ পরেও কোনো শব্দ শুনতে না পেয়ে পর্দা একটু সরিয়ে দেখলেন, নলটা কোমরে রাখা হয়েছে। তিনি বিরক্ত হয়ে ফিরে এলেন।
৪. জমিদার পরিবারের বিশ-পঁচিশজন মোটা মোটা কাপড়ের বোরকা পরা নারী হজে যাবার পথে কলকাতা স্টেশনে এলেন। তাদের স্টেশনের ওয়েটিং রুমে বসালে লোকে দেখতে পাবে। তাই প্লাটফ্রমে উপুর করে বসিয়ে মস্ত ভারী শতরঞ্জি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলো। তাদের সঙ্গে থাকা হাজি সাহেব একটু দূরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিতে লাগলেন। তারা ওই অবস্থায় কয়েক ঘণ্টা থাকার পরে ট্রেন আসার সময় হলো। রেলের একজন কর্মচারী হাজি সাহেবকে তার আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে বললেন। হাজি সাহেব বললেন, ওইসব আসবাব না, বাড়ির মেয়েরা। কর্মাচারীটি আবারও একটি 'বস্তায়' লাথি দিয়ে ওগুলো সরাতে বললেন। ভেতরে থাকা মেয়েরা লাথি খেয়েও টু শব্দ করেনি।
৫. একবার এক লেডিস কনফারেন্স উপলক্ষে রোকেয়া আলীগড় গিয়েছিলেন। সেখানে এক ভদ্রমহিলার বোরকার প্রশংসা করায় তিনি বোরকা সম্পর্কে নিজের জীবনের কিছু অভিজ্ঞতার গল্প বললেন। একবার এক বাঙালি ভদ্রলোকের বাড়িতে বিয়ের নিমন্ত্রণে গিয়েছিলেন। সেখানকার ছেলে-মেয়েরা তাকে বোরকাসহ দেখে ভয়ে চিৎকার করে পালিয়েছিল। তিনি একবার কলকাতায় এসে আরও কয়েকজন বোরকাপরা নারীর সঙ্গে খোলা মোটরগাড়িতে পথে বের হয়েছিলেন। কলকাতার পথের ছেলেরাও তাদের ভূত মনে করে ছুটে পালিয়েছিল।
ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান-অনুশীলন বই (পৃ: ১২১)
একটু ভাবুন এই কটুক্তিমূলক কাহিনিগুলো পড়ার পর ১২-১৩ বছরের ছেলেমেয়েদের মনে কী প্রভাব পড়বে? তাদের মধ্যে যারা পর্দা করে, বোরকা পড়ে - আল্লাহর আইনের প্রতি ভালোবাসার কারণে পড়ুক কিংবা ব্যক্তিগত পছন্দের কারণে পড়ুক - তারা স্কুল কলেজে কতটা লাঞ্চিত হবে অপদস্ত হবে একবার ভেবে দেখেছেন।
ভুত, পেত্নী, বস্তা বলে হাসিঠাট্টা করবে। অতঃপর সে মেয়েটি পর্দা ছেড়ে দিবে নয়তো উগ্রবাদী দেশ ভারত কিংবা ফ্রান্সের মুসলিম মেয়েদের মতো পড়াশোনা বন্ধ করে দিবে।
ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমনকি জাতীয় বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও মেয়েরা পর্দার কারণে চরম লাঞ্ছনার শিকার হয়ে আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমান শিক্ষা সিলেবাস যে এই লাঞ্ছনাকে আরও কতগুণে উসকে দিবে তা একমাত্র আল্লাহই জানে।
রবিউল ইসলাম
লেখক ও গবেষক, সত্যমনা ব্লগ।
বিঃদ্রঃ পরবর্তী পর্বে উক্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাহিনিগুলোর যৌক্তিক বিশ্লেষণ করা হবে ইনশাআল্লাহ।
COMMENTS