দাওয়াহ মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি মুমিন জীবনের একটি অন্যতম দায়িত্ব। মহাপবিত্র ঐশী গ্রন্থ আল কুরআনুল কারীমে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন— "তোমরাই হলে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। তোমাদেরকে বের করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য অর্থাৎ তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। "(সুরা আল-ইমরান-১১০)
আল্লাহ তায়ালার বাণী সুস্পষ্টভাবে আমাদের এই কথার জানান দিচ্ছে যে, এই মুসলিম উম্মাহ পূর্বেকার সকল উম্মার তুলনায় সর্বশ্রেষ্ঠ। আর তা এই কারণে যে, এই উম্মাহ মানুষের মাঝে দাওয়ার কাজ করবে। আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হওয়ার পিছনে দাওয়াহ যে অন্যতম একটি উপলক্ষ তার আরেকটি কারণ হলো আমাদের উপর সেই মহান দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে যা ছিল কেবল নবী রাসূলগনের উপর। পূর্বেকার কোন উম্মার উপর এই নবীওয়ালা দায়িত্ব ছিল না। এই বিশেষত্ব শুধু মুহাম্মদ (স:) এর উম্মতকে দেয়া হয়েছে। যার ফলে আমরা হয়েছি সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি।
তাই আমি মনে করি উক্ত শ্রেষ্ঠত্বের হক আদাই করা প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য। কিছুটা হলেও নিজ স্বাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করা, যার যার অবস্থানের খাপখাওয়া দাওয়াক্ষেত্র খুঁজে নেয়া। জীবনে যদি দাওয়ার কিছুটা হক আদাই করতে না-ই পারেন! তাহলে আপনি শ্রেষ্ঠত্বের দাবী কেন করছেন নিজেকে একবার প্রশ্ন করে দেখুন।
দাওয়াকে যারা জীবনের লক্ষ্য হিসেবে চিন্তা করেন , দাওয়াক্ষেত্রে এক্সট্রা অডিনারী কিছু করতে চান তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছি; আপনি কোন্ লাইনে দাওয়ার কাজ করতে চান , তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন । প্রথমত, আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে আপনার ট্যালেন্ট, আপনার ঝোঁক কোথায় অর্থাৎ কোন কাজটা আপনি ভালো করতে পারেন, কোন কাজের প্রতি আপনার ঝোঁক বেশি, তা চিহ্নিত করে সেই মাধ্যমটিকে দাওয়াক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে। যেমন, আপনি হয়তো খুব ভালো কথা বলতে পারেন তাহলে একে পুঁজি করে বক্তৃতা, লেকচার, সাংবাদিকতা, ইউটিউবিং ইত্যাদি ইত্যাদি কথার মাধ্যমে প্রভাবিত করা যায় এমন যে কোন ক্ষেত্রে আপনার সেই ট্যালেন্ট কাজে লাগালে অবশ্যই অধিক ফলপ্রসূ হবে। আর শুধুমাত্র কথাবলা না, আপনি হয়তো ভালো লিখতে পারেন, ভালো বুঝাতে পারেন, ভালো গাইতে পারেন, অথবা টেকনোলজির কোন দিক সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন। আপনি যাই পারেন না কেন, দাওয়ার মধ্যে তার উপযোগী প্রয়োগক্ষেত্র অবশ্যই আছে, আপনাকে শুধু তা খুঁজে বের করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, দাওয়ার বিষয়বস্তু নির্ধারণের ক্ষেত্রে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে, আপনি যেহেতু দ্বীন ইসলামের স্বার্থেই দাওয়ার এই মহান মিশন নিয়ে মাঠে নামছেন সুতরাং সেই স্বার্থের হক যাতে যথাযথ ভাবে আদাই হয় সেজন্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোন্ খেদমত অধিক কার্যকরী তা মাথায় রেখে দাওয়ার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করতে হবে, কেননা দ্বীনের হক তখনই আদাই হবে যখন আপনি দ্বীনের চাহিদা মোতাবেক দ্বীনকে কিছু দিতে পারবেন।
ধরুন, একটা রেস্টুরেন্টে ওয়েটার, ক্যাশিয়ার, ম্যানেজার রয়েছে কিন্তু যথেষ্ট পরিমান বা মানসম্মত বাবুর্চি নেই। এখন যদি আপনি এই প্রতিষ্ঠানের উন্নতি চান, চাহিদা মেটাতে চান তাহলে ওয়েটার কিংবা মানেজার নয়, একজন মানসম্মত বাবুর্চি হলেই আপনি তা করতে পারবেন।
সর্বোপরি পরকালে মুক্তি ও চরম সুখের জান্নাত লাভের জন্য দাওয়াহ অত্যান্ত সুকৌশলীও একটি মাধ্যম। কেননা আপনি আমি একা একা আমল করে কতটুকু নেক অর্জন করতে পারবো! কিন্তু আমার আপনার দাওয়ার উসিলায় যদি একজন মানুষও জাহান্নামের পথ থেকে জান্নাতের পথে ফিরে আসে তাহলে সে মানুষটি গোটা জীবন নিজে যা আমল করবে এবং তার উসিলায় কেয়ামত পর্যন্ত যারা আমল করতে থাকবে, সে সমস্ত আমলের একটি অংশ আমাদের আমলের সাথেও যোগ হবে ইনশাআল্লাহ। অতএব যারা অল্প আমলেই বেশি লাভবান হতে চায়, তাদের জন্য দাওয়ার বিকল্প কোন পথ নেই।
রবিউল ইসলাম।
লেখক ও গবেষক, সত্যমনা ব্লগ।
COMMENTS