|| পরকীয়া ||
ইরুধা মনি সোহা। সবাই ডাকে ইরু বলে। খুবই চালাক মেয়ে। একেবারেই তিড়িংবিড়িং টাইপের। বাসার সবাই ইরু ডাকলেও মাদরাসার ক্লাসমেটরা মজাকরে ডাকে 'উড়ু-উড়ু' বলে। তার চঞ্চলতা যে পরিমাণে এতে উড়ু-উড়ু না ডেকে উড়ুক্কু ডাকলে আরো ভালো হতো।
ইরুর দুষ্টমি অধিক পরিমাণে বলে কেউ তার সাথে মিশে না। তবে তার মতো আরেক জন আছে। ও'র নাম আয়েরা। ইরু আর আয়েরার মাঝে কিছুটা মিল আছে। আয়েরা ইরুর মতো দুষ্ট হলেও সে এটকু জ্ঞানীগুণি। সবার সাথে তালমিলিয়ে চলতে পারে। ইরুর সাথে কেউ না মিশলেও সবাই তাকে উড়ু-উড়ু ডেকে মজা নিতে ভুলে না। মাদরাসার প্রায় সব ছাত্রীই তার সাথে মজা করে। আয়েরার সাথে ইরুর যেহেতু একটু খাতির। তাই একদিন আয়েরা বললো, কিরে ইরু! তোকে সবাই উড়ু-উড়ু বলে হাসাহাসি করে তুই কিছু বলিস না কেন?
ইরু: তুই কি বলিস না ?
আয়েরা: আমি তো আর ওতো বলি না। হয়ত দু'একবার বলি।
ইরু: কম আর বেশি। বলছ তো...।
আয়েরা চুপ করে আছে। আয়েরার চুপ থাকা দেখে ইরু বললো, আয়েরা! সবাই আমাকে উড়ু-উড়ু বলে যখন হাসাহাসি করে তখন আমারও ভালো লাগে। আমার কারণে এতোগুলো মানুষ হাসে। আমি তো অন্য কিছু দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোঁটাতে পারবো না। কমপক্ষে আমার নাম পরিবর্তন করে তারা হাসে এতে আমার খারাপ লাগলেও সেটা আর মনে হয় না৷
ইরুর মুখে এ ধরনের কথা শুনে আয়েরা 'থ' হয়ে গেলো। এতো দুষ্ট ইরু এভাবেও চিন্তা করতে পারে! চোখ কপালে উঠার মতো ব্যাপার!! দুষ্টদের ভেতরে একটা ভালো মানুষ লুকিয়ে আছে । আয়েরা যেন নতুন করে ইরুকে দেখছে। এ ইরু যেন আগেকার ইরু নয়। মনে হচ্ছে ইরুর মাঝে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু নাহ। আজকেও তো অনেক দুষ্টমি করলো ছুটির পর।
ইরু : কী ভাবছিস মনেমনে?
আয়েরা : কিছু না।
ইরু: ও।
আয়েরা: আকাশ খারাপ করেছে। বৃষ্টি আসতে পারে। তাড়াতাড়ি বাসায় যা। কাল ক্লাসে দেখা হবে। ভালো থাকিস।
ইরু: চলে যাচ্ছিস ? উড়ু-উড়ু বলবি না ?
আয়েরা: হ বলবো। কাল ক্লাসে সবার সামনে বলবো। একসাথে সবাই হাসবো।
একা হাসার চেয়ে সবাইকে নিয়ে হাসা ভালো না...। হা হা হা...। যা যা কালকে দেখা হবে।
আয়েরা বাসায় এসে বইখাতা রেখে সোজা ছাদে। বৃষ্টি হচ্ছে মুষলধারে। ঘাসফুল ও কামিনিফুলগুলো টবে ভরপুর ফুটেছে। এদিকে নাঈমা ও আসমা এসেছে বৃষ্টিতে ভেজবে বলে। এরা দুজনও ক্লাসমেট। আয়েরা হা করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টির ফোঁটা মুখের ভেতর আঁচড়ে পড়ছে। আসমা ছাদের একপাশ থেকে আরেক পাশে পায়চারি করছে। নাঈমা ঘাসফুলগুলো আলতো করে ছুঁইয়ে দিচ্ছে।
আয়েরা ওদের দুজনকে ডাক দিলো। ইরুর কথা জিজ্ঞেস করলো। বললো, ইরুকে তোরা কেমন মনে করিস?
আসমা বলে উঠলো ইরুকে উড়ু-উড়ু মনে করি। আয়েরা একটা ধমক দিলো আসমাকে। আসমা বয়সে একটু ছোট। ধমক খেয়ে চুপ মেরে গেলো।
নাঈমা বললো, হঠাৎ ইরুর কথা জিজ্ঞেস করলি যে ?
আয়েরা: মেয়েটাকে আমরা যা-ই মনে করি, ও'র ভেতর একটা শান্ত মানুষ লুকিয়ে আছে।
জানিস, ও আছকে কী বলেছে? ও বলেছে, আমরা ও'কে নিয়ে যে মজা করি ও নাকি এতে আনন্দ পায়৷ ও'র কাছে কষ্ট লাগলেও আমরা সবাই হাসি এটা দেখে ও'র শান্তি লাগে।
নাঈমা: আসলে ইরুর সম্পর্কে আমরা তো জানিই। ও'র বাবা ও'কে ছোট রেখেই বিদেশ গিয়েছেন। প্রায় ১২ বছর কেটেছে বাবার আদর পায়নি। আবার শাসনও পায়নি। এদিকে ইরুর মা ইরুকে ততোটা আদর করেন না। সারাদিন নাকি সাজগোছ আর ঘোরাঘুরির ভেতরই থাকেন।
আয়েরা: আচ্ছা তোরা শোন, আমরা আর ইরুকে নিয়ে এভাবে মজা করবো না। যদিও আমরা মজার ছলে হাসাহাসি করি। 'ও' প্রতিবাদ করে না। কিন্তু মনে মনে তো কষ্ট পায়৷ যেটা সে আমাদেরকে বুঝতে দেয় না। আমরা আগামীকাল আমাদের ক্লাসের সবাইকে বিষয়টা নিয়ে সতর্ক করবো। আমরা সবাই মিলে ইরুকে সরি বলবো। আমাদের পক্ষ থেকে ইরুর জন্য এটা একটা সারপ্রাইজ। আমরা একটু আগে আগে মাদরাসায় যাবো৷ ইরু মাদরাসা ঢুকার সাথে সাথে আমরা এক সাথে 'সরি ইরু' বলে তাকে চমকে দিবো।
বৃহস্পতিবার। সবাই ইরুকে চমকে দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু ইরু কেন যেন দেরি করছে ৷ ইরু তো ক্লাস মিস করে না। এরেই মাঝে মাদরাসার শিক্ষিকার কাছে খবর আসলো ইরু মায়ের হাতে খুন হয়েছে । মুহূর্তেই সারা মাদরাসায় খবর ছড়িয়ে পড়লো। ইরুর ক্লাসের সবাই ছুটা শুরু করলো ইরুর বাড়ির দিকে।
ইরুর নিথর দেহটা পড়ে আছে চাটাইয়ের ওপর। আজ আর কেউ ইরুকে দেখে হাসে না। আজ সবাই ইরুকে দেখে কাঁদছে। আয়েরা চিৎকার দিয়ে ডাকছে ইরু...। এই ইরু! আমরা তো তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়ে ছিলাম৷ কিন্তু তুই আমাদেরকে সারপ্রাইজ দিয়ে দিলি। সবার চোখে পানি। ডুকরে ডুকরে কাঁদছে ইরুর সহপাঠীরা। কিন্তু ইরু তো আর আসবে না...।
পরে দিন নিউজ এলো "মায়ের পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়ায় কওমি মাদরাসার ছাত্রীকে খুন করলো মা"।
( গল্পটি বাস্তব ঘটনাকে সামনে রেখে লেখা হয়েছে। চরিত্রের নাম ও গল্পের গাঁথুনি কাল্পনিক। কিন্তু গল্পটা বাস্তবিক)
COMMENTS