Oxford Dictionary তে Secularism এর সংজ্ঞা:Secularism means the doctrine morality should be based solely on regard to the wellbeing of mankind in the present life, to exclusion of all consideration drawn form belief in god or in future life.
অর্থ: সেকুলারিজম এমন একটি মতবাদ, যে মতবাদে মানবজাতির ইহজগতের কল্যাণ চিন্তার উপর গড়ে উঠবে এমন এক নৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে থাকবে না কোনো ধরনের আল্লাহ ও পরকাল বিশ্বাসভিত্তিক বিবেচনা।
Encyclopedia বা বিশ্বকোষে Secularism এর দুটো সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে:
1.
Secularism Spirit on tendency especially a system of political or Social philosophy that reject all from fo religious faith.
ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ এমন একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শন যা সকল ধর্মবিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করে।
2.
The view that Public education and other mattens of civil Society conducted without the introduction of religious element.
সেকুলারিজম এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে সাধারণ শিক্ষা ও সামাজিক সংস্থা পরিচালনায় কোনো ধরনের ধর্মীয় উপাদান অন্তর্ভুক্ত হবে না।
মোট কথা, একমাত্র ব্যক্তি জীবন ছাড়া অন্যকোথাও ধর্মকে আনা যাবে না। সমাজ, রাষ্ট্র, শিক্ষা, ব্যাবসা ইত্যাদি যত ক্ষেত্র রয়েছে, কোনো ভাবেই এগুলোতে ধর্মের প্রভাব চলবে না।
সেকুলারিজম প্রাচ্যের কোনো মতবাদের নয়। পাশ্চাত্যের কিছু ধর্ম বিদ্বেষী দার্শনিকের গবেষণার ফলাফল। অর্থাৎ ইউরোপ থেকে ছড়িয়ে পড়া মতবাদ।
জর্জ জ্যাকোব হোলাইয়ক ( George Jacob Holyoake
১৮১৭ - ১৯০৫)
যিনি ১৮৪১ সালে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ছিলেন, ঈশ্বর বলতে কিছু নেই। খৃষ্ট
ধর্মীয় আইন অনুযায়ী তাকে ক্যালটেনহামের কারাগারে পাঠানো হয়৷ ধর্মের প্রতি চরম বিদ্বেষ আর ঘৃণা নিয়ে, কারাগারের দিনগুলো কাটান তিনি।
কারাগার থেকে বের হলেন। এবার শক্ত হাতে কলম ধরলেন ধর্মের বিরুদ্ধে। Reasoner নামক পত্রিকায় ছড়িয়ে দিতে লাগলেন ধর্মহিনতার বার্তা। পরকাল, পুনরুত্থান, জান্নাত জাহান্নাম এসব কিছু থেকে ফিরাতে লাগলেন শুধু ইহজীবনের দিকে। ছুটতে থাকলেন, উদ্দেশ্যে পৌঁছতে দুরন্ত ঘোড়ার ন্যায়।
১৮৪৯ সালে তিনি Secular Society গঠন করেন। গড়ে তুলেন বাঁধ ভাঙা আন্দোলন।
এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লো দেশের আনাচে কানাচে। ১৮৬৬ সালে তার সংগঠনে যোগ দিলেন Mr.Charles Bradlaugh. তখন এই Secular Society হয়ে গেলো International Secular Society । Mr. Charles হলেন ওই সোসাইটির সভাপতি। আর জর্জ জ্যাকব হলেন সেক্রেটারি।
জর্জের থেকে একধাপ এগিয়ে আছেন ধর্মের প্রতি বিদ্বেষে চার্লস। তাই ১৮৮০ তে যখন বিলাতে Northampton আসন থেকে M. P নির্বাচিত হন। তখন তিনি ধর্মীয় কায়দায় শপথ নিতে হবে বলে, শপত পর্যন্ত নেননি। ফলে তার আসন খালি পড়ে থাকে। দু'বছর পারে শপথ নেয়ার এ পদ্ধতিই বাতিল করা হয়। এরপর তিনি একই আসন থেকে টানা চার বার M.P নির্বাচিত হন। আর তখনই এ আন্দোলন স্বদেশ থেকে বের হয়ে অন্যান্য রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকটা বুক ফুলিয়ে। ধর্মকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে।
থেমে নেই তাদের কাজ। সময়ের গতির সাথে বাড়ছে তাদের কাজেরো গতি।
সেকুলারিজমের আন্দোলনকে বেগবান করতে, আধুনিক যুগের বুদ্ধিজীবীরা যেনো আরো কঠিন। আরো সতর্ক। ধর্মের কথা শুনলেই যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।
চার্লস তার Autobiography বইয়ে লিখেন:
'সেকুলারিজম ও আস্তিকতা পাশাপাশি চলতে পারে না। তাই আস্তিক্যবাদী বিশ্বাসের সাথে লড়াই করা সেকুলারিজমের জন্য অপরিহার্য। অদৃশ্য বিশ্বাস ও মানবপ্রগতি পাশাপাশি চলতে পারে না'।
'ধর্মীয় বিশ্বাস প্রতিহত করাই সেকুলারিজমের কর্তব্য। কেননা এসব কুসংস্কার মূলক ধারণা, বিশ্বাস যতোদিন পর্যন্ত পূর্ণ শক্তিতে বিরাজমান থাকবে, ততোদিন পর্যন্ত বস্তুগত উন্নতি লাভ কল্পনাতীত হয়ে থাকবে।
'ধর্ম অজানা জগত নিয়ে কথা বলে। ফলে ইহকালীন বিষয়ে ধর্মের কোনো স্থান নেই, যেমন পরকালের ব্যাপারে সেকুলারিজমের কোনো বক্তব্য নেই'।
*Jefferson বলেন:
'সেকুলারিজম ধর্ম ও রাষ্ট্রের মাঝে একটি দেয়াল নির্মাণ করতে চায়'।
*John Stuart Mill বলেন:
'ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে মানুষকে অন্যকারো কাছে অর্থাৎ স্রষ্টার কাছে দায়ী থাকতে হবে - আমি এ ধারণাকে দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করছি'।
আরো কিছু বিখ্যাত ব্যক্তি এ আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, চার্লস সাউথওয়েল, থমাস কুপার, প্যাটারসন, D, W, ফুট।
এনাদেরও একই বক্তব্য।
Secularism is independent of Religion.
Secularism is not dependent on Religion.
Secularism is not subordinate to Religion.
Secularism is not controlled by Religion.
A secular person does not belongs to any Religion.
সেকুলারিজম নতবান যেমন একজন মুসলিমের শত্রু, ঠিক হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি, খৃষ্টান তাদেরো শত্রু।
এ মতবাদ যেমন ইসলামের জন্য হুমকি, ঠিক অন্যান্য ধর্মের জন্যও হুমকি।
কিন্তু মজার ব্যপার হলো, এ মতবাদ ইসলামের কাছে পরাজিত। ঠিক অন্যান্য মতবাদ যেমন পরাজিত। দরকার শুধু কিছু ত্যাগী ব্যক্তিত্বের। যারা সামান্য ত্যাগ স্বীকার করবে এর কবর রচনা করতে।
* * * * *
খৃষ্টীয় যাজক ও সেকুলারদের মাঝে কিছু মৌলিক বিষয়ের সংঘাত ছিলো৷
প্রথম বিষয়টা হলো, যাজক কর্তৃক বস্তুগত উন্নতির বাধা। তারা মানুষকে সম্পূর্ণ দুনিয়া বর্জনের উপদেশ দিতেন৷ অথচ নিজেরাই দুনিয়ার ভোগবিলাসে ডুবে থাকতেন।
দ্বিতীয়ত তারা সন্নাসবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। এবং এ বিষয়ে মানুষকে উদ্বধ্যও করতেন। এখনো ক্যাথলিক পোপেরা এমনটা করে থাকেন। যেটা আসলে এক প্রকার বাড়াবাড়ি।
তৃতীয়ত যাজকদের পাশবিকতা। যেটা ইতিহাসে আজো কলঙ্ক হয়ে আছে। Islam and The world (আবুল হাসান আলী নদভী রহঃ এর রচিত) বইটিতে সুন্দরভাবে যাজকদের সেই পাশবিকতার চিত্র ফুটে উঠেছে।
যাজকরা সে সময় বিজ্ঞানীদের উপর অমানবিক নির্যাতন করেছেন। তারা পুড়ানো থেকে শুরু করে ক্ষুধার্ত সিংহের খাঁচায় পর্যন্ত বিজ্ঞানীদেরকে নিক্ষিপ্ত করেছেন। আর এ বিষয়গুলো সেকুলাররা মেনে নিতে পারিনি।
যাজকদের সাথে তাদের বিরোধিতা গিয়ে পড়ে খৃষ্টধর্মের উপর। ক্রমান্বয়ে ধর্মের উপর।
এখন দেখার বিষয় হলো সর্বশেষ চূড়ান্ত ধর্ম ইসলাম!? আমাদের ইসলানও কি ঐ বিষয়গুলোর সাথে একমত!!?
না। আমাদের ইসলাম তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। ভিন্ন। অনন্য। ইসলাম সকল অন্যায়ে যেভাবে সোচ্চার ছিলো। সকল সমস্যার যেভাবে সমাধান দিয়েছে। ঠিক এখানেও তাই।
ইসলাম বস্তুগত উন্নতির জন্য 'বাধা' নয়। বরং উদ্বুদ্ধুকারী। কোরআনে অনেক আয়াত আছে যা দুনিয়াতে আল্লাহর রিজিক সন্ধান করতে বলেছে৷ এমনকি এভাবে বলেছে, তোমরা ফজর আদায় করে কর্মের জন্য। রিজিক সন্ধানে বেরিয়ে পড়ো।
সন্নাসবাদের বিরুদ্ধেও ইসলামের বাণী প্রদীপ্ত।
'রাসূল সাঃ বলেন, হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যাদের বিবাহের সামর্থ্য আছে সে যেন অবশ্যই বিবাহ করে...।
(বোখারী, মুসলিম)
আর জ্ঞান বিজ্ঞান! সে তো ইসলামই শিক্ষা দিয়েছে। আধুনিক যুগে যারা বিজ্ঞানের মডেল সেজে বসে আছে। তাদের বিজ্ঞানের সৌধ নির্মাণ হয়েছে মুসলমানদের জ্ঞান বিজ্ঞানের ভিত্তির উপর।
চলুন ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখি। ৩২৪ সাল। রোম সম্রাট কনস্টাইন। তুরস্ক দখল করলেন। রোম থেকে রাজধানী স্থানান্তর করে ইসতাম্বুলে স্থাপন করলেন। নাম রাখলে 'কনস্টানটিনেপোল'। বাইযানটাইন সম্রাটগণ এখান থেকে ভূমধ্যসাগরের উভয় তীরে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় দাপটের সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তাদের রাজত্ব কালে ইউরোপের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা কনস্টান্টিনোপল, বাগদাদ, দামেস্ক, বৈরুত,কায়রো,গ্রানাডা, কর্ডোভা ইত্যাদি মুসলিম অধ্যষিত স্থানের ইসলামীক বিদ্যাপীঠগুলোতে লেখা পড়া করতো।
১৪৫৩ সালে উসমানী খলিফার হাতে কনস্টান্টিনোপলের পতন হয়৷ আর তারা ইউরোপ ফিরে যায়৷ যাবার সময় বই-পুস্তক, গবেষণালব্ধ তথ্য ও তত্ব এবং অতীতের পান্ডুলিপি সাথে নিয়ে যায়।
তা ছাড়া এ সময় তারা আরবি থেকে বহু মূল্যবাণ বই-পুস্তক ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ করেন।
সেকুলারদের যেন মূলভিত্তিতে আঘাত। এখন বিশেষকরে বাংলাদেশ সহ মুসলিম দেশগুলোতে তাদের অন্য গান। নিজেদের মূল পরিচয় গোপন করে এখন Secularism এর ভিন্ন সংজ্ঞা তারা দিচ্ছেন।
যেমন: তারা এখন বলে বেড়ায় মূলত আমরা সংখ্যালঘুদের বিষয়টা বিবেচনা ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম থেকে বাদ দিতে চাই।
১/ আমরা চাই সব ধর্ম রাষ্ট্রে সমান নিরাপত্তা পাক।
২/ সব ধর্ম নিজ নিজ গতিতে চলুক৷
৩/ এক ধর্ম যেন আরেক ধর্মের উপর চড়াও না হয়।
ইত্যাদি।
হাস্যকর, ধর্মকে নির্মূল করার জন্য যাদের জন্ম হয়েছে। তারাই কিনা ধর্মকে নিজ নিজ স্বাধীনতা দিতে চায়।
প্রচলিত সেকুলারিজম মানে অ্যান্টি-রিলিজিয়ন। এ মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করুন। ইসলামি নিরপেক্ষতাকে প্রতিষ্ঠিত করুন। ইসলামই কেবল অন্যের ধর্ম পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়।
সত্যমনা লেখক
আহমাদ আব্দুর রাজ্জাক
সত্যমনা ডট কম __মুক্তচিন্তা
আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিন
আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন
খুব সুন্দর।
উত্তরমুছুন