গায়, অথচ তাল মিলায় না।
কিছু তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক নাস্তিকদের অবস্থা হলো এই। তারা নিজেরা বলে তারা নাকি খুব অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করে। অথচ যেই বইতে এই ডায়লগ মেরেছে, সেই বইয়ের-ই পরের পৃষ্ঠায় দেখা যায় ভিন্নরূপ। সাম্প্রদায়িক রূপ।
‘যা আমাদেরকে পড়তে দেইনি’ নামে বেশকিছু নাস্তিক বইটি সংকলন করেছে। ২০১৩ তে হেফাজতে ইসলাম পাঠ্যপুস্তকে কিছু পরিবর্তন পরিমার্জন করার দাবি করেছিল। এবং সরকার তা
মেনেও নিয়েছিল। তাদের মতে হেফাজতে ইসলামের এই দাবি নাকি সাম্প্রদায়িকতার পরিচয়। যার ফলশ্রুতিতে তারা উক্ত বইটি সংকলন করেছে। এর ভূমিকায় তারা বেশকিছু অসাধারণ অসাম্প্রদায়িক বক্তব্য পেশ করেছে। ভালো, এটা মন্দ কিছু নয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ভূমিকা শেষ হতে না হতেই তাদের
অসাম্প্রদায়িকতার চেতনাও ফুরিয়ে গেল। তারপর মনে হলো যে, ভূমিকার বক্তব্যটা আসলে হেফাজতের সাথে নয় বরং তাদের সাথে বেশি খাপ
খাচ্ছে।
চলুন আগে বক্তব্যটি শুনে আসি-
❝আমি মনে করি , পাঠ্যবই হওয়া উচিত সার্বজনীন এবং পরমতসহিষ্ণু চেতনার। বইগুলাের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেনাে সহনশীল ও মানবিক হয় এবং ভিন্নমত ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় , পাঠ্যবই প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত । কিন্তু , পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত বীজ যদি শিক্ষার্থীদের মনে এভাবে বপন করা হতে থাকে , তাহলে দিনশেষে আমাদের সব শুভচেষ্টাই ব্যর্থ হবে । ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করলেই আমার মনে ভেসে ওঠে আমার আড়াই বছর বয়সী ভাগ্নে কিঞ্জল – এর মুখ । বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিঞ্জলের মতাে শিশুরাও আগামীতে আমাদের পাঠ্যবই পড়ে অসাম্প্রদায়িক , সার্বজনীন ও মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্বপ্নের বাঙলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে যাবে , এটাই প্রত্যাশা । শুধু , আমরা যেনাে ওদের ‘ মানবিক মানুষ ’ হবার পথটা বন্ধ করে না দেই।❞ [১]
খুব সুন্দর বক্তব্য। এমন বক্তব্য প্রত্যেকের হওয়া চাই। কিন্তু যদি শুধু সেটা বক্তব্য-ই রয়ে যায় তাহলে কি কোন ফায়দা আছে? এখন আমরা তাদের উক্ত বইয়ের প্রথম কবিতাটি বিশ্লেষণ করে দেখবো কতটা অসাম্প্রদায়িকতার ছোঁয়া আছে সেখানে! এবং উপরের বক্তব্যের সাথে কতটা খাপ খাচ্ছে!
এই কবিতাটি হচ্ছে হুমায়ুন আজাদের। যাকে আমরা মোটামুটি সবাই চিনি। স্বাভাবিক পরিচয়ে না হলেও একটু ভিন্ন পরিচয়ে। চুলকানি মাস্টার। ধর্মকে নিয়ে যার অঘাত চুলকানি। অসাম্প্রদায়িকতার গান গাইতে তার কবিতাটি তারা প্রথমে না আনলেও পারতো! চলুন তাহলে বিশ্লেষণ শুরু করি…
কবিতার নাম.. বই
হুমায়ুন আজাদ
বইয়ের পাতায় প্রদীপ জ্বলে
বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে ।
যে – বই জুড়ে সূর্য ওঠে পাতায় পাতায় গােলাপ ফোটে সে – বই তুমি পড়বে । যে – বই জ্বালে ভিন্ন আলাে
তােমাকে শেখায় বাসতে ভালাে ।
সে – বই তুমি পড়বে ।
যে – বই তােমায় দেখায় ভয়
সেগুলাে কোনাে বই – ই নয় ।
সে – বই তুমি পড়বে না ।
যে – বই তােমায় অন্ধ করে
যে – বই তােমায় বন্ধ করে
সে – বই তুমি ধরবে না ।
বইয়ের পাতায় প্রদীপ জ্বলে
বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে । [২]
কবিতাটির প্রথম কয়েক লাইনের সাথে দ্বিমত করার প্রশ্নই আসে না। খুব সুন্দর। তবে যেই লাইনগুলো লেখার জন্য আমি মনে করি হুমায়ুন আজাদ সাহেব এই পুরো কবিতাটি লিখেছেন সেগুলো বিশ্লেষণ যোগ্য।
যেমন –
যে – বই তােমায় দেখায় ভয়
সেগুলাে কোনাে বই – ই নয় ।
সে – বই তুমি পড়বে না ।
স্থান কাল পাত্র বিবেচনায় এই পঙতিগুলো যে হুমায়ুন আজাদ আল কোরআন সম্পর্কে বলেছে তা বলার অবকাশ রাখে না। ৯০% মুসলমানের দেশে তাদের ধর্মীয়গ্রন্থ সম্পর্কে এই ধরনের পঙতি উচ্চারণ- সেগুলাে (কোরআন) কোনাে বই – ই নয় ।
সে – বই তুমি পড়বে না ।
খুব অসাম্প্রদায়িকতার পরিচয় দেয়। তাই না! এ বই ৯০% মুসলমানরা যেন না পড়ে। এটাই তারা চায়। এগুলোর
মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত বীজ কি শিক্ষার্থীদের মনে বপন করা হচ্ছে না?
তারা নাস্তিক বিধায় তারা ভাবে কোরআন মানুষকে অন্ধ করে। মানুষকে বন্ধ করে। তাদের এই বিষাক্ত অপিনিয়ন গুলো সমাজে ছড়াতে দেয়নি বলে হেফাজত সাম্প্রদায়িক। আর মানুষের মনে ঘৃণার বীজ বপন করে তারা হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক। কী চমৎকার!
এখন আসি পঙতিগুলোর যৌক্তিক বিশ্লেষণে…
যে বই ভয় দেখায় সেগুলো কোন বই নয়। যার ফলে সেগুলো পড়া যাবে না।
কেননা কোরআন আল্লাহর ভয় দেখায়।
আচ্ছা ভয় দেখানোটা কি সবক্ষেত্রে মন্দ। নাকি কিছু ক্ষেত্রে আবশ্যক। না হলেই নয়। যেমন পুলিশ কিংবা আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মানুষকে শাস্তির ভয় দেখায়। অপরাধ করলেই শাস্তি পেতে হবে। সে ভয়ে অনেকেই অপরাধ থেকে বেচে থাকে। সুতরাং এই ভয় দেখানোটা কি মন্দ নাকি
অপ্রয়োজনীয়? আবার মা-বাবার অনেক সময় সন্তানকে শাসনার্থে ভয়
দেখাতে হয়। না হয় সন্তান বিগড়ে যায়।এগুলো কি ফলবান নয়?
কোরআনও তো সেইম এই কাজটা করছে ইহকালে যেন আল্লাহর ভয়ে মানুষ সমস্ত অপরাধ থেকে বেঁচে থাকতে পারে, এবং পরকালে মুক্তি পেতে পারে।
এখন যদি হুমায়ুন আজাদের সাথে সুর মিলিয়ে আমরা বলি, যে মানুষ তোমায় দেখায় ভয়, তারা আসলে মানুষ-ই নয়।
তাদের সাথে তুমি মিশবে না।
তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে!?
তারা যদি এই ধরনের বিষাক্ত পঙতিগুলো আমাদের অবুঝ শিশুদের মনে ঢুকিয়ে দেয়, তাহলে তো তারা সমাজবিরোধী বেপরোয়া হয়ে বেড়ে উঠবে।
আচ্ছা কোরআন মানুষকে অন্ধ করে? কই কখনো তো শুনলাম না কোরআন পড়ে মানুষ দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছে!? তাহলে অন্ধ করলো কীভাবে?
ও আচ্ছা! তাহলে নিশ্চয়ই আত্মিকভাবে অন্ধ করে, তাই না! আর এই অন্ধ করার মানে নিশ্চয়ই কোরআন মানুষকে চিন্তাপ্রতিবন্ধী হয়ে থাকতে বলে, কিংবা কোরআন সম্পর্কে গবেষণা করা থেকে বিরত থাকতে বলে তাই না? কিন্তু কোরআন পড়লে যে আমরা এর বিপরীত মেসেজ পাই। জ্ঞানীদের চিন্তা করার জন্য কোরআন অনুরোধ নয়, আদেশ করছে অসংখ্য আয়াতের মাধ্যমে।
See also উম্মুল মু'মিনীন হযরত মারিয়া কিবতিয়া রা.। খৃস্টান মিশনারী ও নাস্তিক-মুক্তমনাদের ভেতরের কথা।
فاعتبروا يا أولي الأبصار.
হে বুদ্ধিমান জ্ঞানী ব্যক্তিগণ, তোমরা চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করো। [৩]
হুমায়ূন আজাদ ইঙ্গিত করেছে কোরআন নাকি মানুষের অন্তরে তালা মেরে দেয়। চিন্তা-ভাবনা করতে দেয় না। অথচ যারা কোরআন নিয়ে গবেষণা করতে অনাগ্রহী তাদেরকে কোরআন বলছে ‘ বরং তাদের অন্তর তালাবদ্ধ’
أفلا يتدبرون القرآن أم على قلوب أقفالها
কেন তারা কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?(যে তারা চিন্তা-ভাবনা করতে পারে না) [৪]
أفلا يتدبرون القرآن
কেন তারা কোরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা গবেষণা করে না? [৫]
এই হলো কোরআনের ভাষ্য। কোরআন সর্বদাই মানুষকে জ্ঞান আরোহনে উৎসাহী করে। তার বিপরীতে সর্বদাই নাস্তিকরা কোরআন সম্পর্কে মিথ্যাচার করে। যাইহোক এখানে আমার উদ্দেশ্য ছিল তারা সর্বদা অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে অথচ নিজেরাই সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক। তাদের প্রত্যেকটা বই যাচাই করলে দেখা যাবে হিংসা, ঘৃণায় পরিপূর্ণ। তারা এই ঘৃণার মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
অবশেষে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এমন গান কেন গাও, যে গানে তাল মেলাতে পারবে না!
সত্যমনা লেখক, Robiul Islam, পেইজ- সত্যমনা ও নাস্তিকতার মূলোৎপাটন।
তথ্য সূত্রঃ
[১] ভূমিকা- ‘যা আমাদের পড়তে দেইনি।’
[২] ‘যা আমাদের পড়তে দেয়নি’- পৃষ্টা-৬
[৩] আল হাশ্র – ২
[৪] মুহাম্মাদ – ২৪
[৫] আন নিসা – ৮২
আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিন
আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন
COMMENTS